
লালমনিরহাটের সমতল(পাহাড় বা টিলা নয় এমন ভূমি) আশাতীত চা উৎপন্ন হচ্ছে যা চা বোর্ডকে বিস্মিত করেছে। উত্তরে সর্বপ্রথম পঞ্চগড়ে এ সমান ভূমির চা উৎপাদন হয়েছিল, সেটা এখন ছরিয়ে পরছে অন্য জেলাগুলোতে। বাণিজ্যিকভাবেই সমতল ভূমিতে হচ্ছে চায়ের চাষ। জেলাজুড়ে এখন প্রায় ২০০ একর জমিতে চা বাগান গড়ে উঠেছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে সর্বপ্রথম হাতীবান্ধা উপজেলায়ই চা বাগান গড়ে উঠেছিল। তবে এখন এর গণ্ডি বিস্তৃতি লাভ করে জেলার ৫টি উপজেলায় হচ্ছে চা চাষ। এ শিল্পে সাফল্যও পাচ্ছেন চা চাষীরা। এজন্য প্রতিনিয়তই এ এলাকার লোকজনের কাছে চা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। ভবিষ্যতে চা শিল্পই লালমনিরহাট জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০০৭ সালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় প্রথমে এক একর সমতল ভূমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে চা চাষ শুরু করেন শাহানারা বেগম সোমা ও ফেরদৌস আলম দম্পতি। তাদের দেখে জেলার অনেক কৃষক চা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। তবে ২০১৫ সাল থেকে চা বোর্ডের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় কৃষকরা চা চাষ প্রসারিত করেন। যা দিন থেকে দিন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কৃষকদের সফলতা অর্জনে চা বোর্ডও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী গ্রামের চা চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪ বছর আগে ১ একর জমিতে চায়ের বাগান শুরু করি। কিন্তু প্রথম দিকে চা চাষ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এমন অবস্থায় এক বছর ধরে স্থানীয় চা বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে চা চাষে সাফল্য আসে। এখন আমার লাভ হচ্ছে।’ একই উপজেলার চা চাষী ধনঞ্জয় কুমার বর্মণ বলেন, ‘চা বোর্ডের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সমতল ভূমিতে এখন আমরা চা উৎপন্ন করতে পেরে খুশি ও গর্বিত।’ ‘বৈদ্যুতিক সমস্যা ও মালিকের মূলধন না থাকায় হাতীবান্ধা উপজেলার বিছনদই গ্রামে ২০১৪ সালে স্থাপিত ফ্যাক্টরিটি বন্ধ রয়েছে। এতে আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে যে, আমাদের উৎপাদিত চা পাতা পঞ্চগড়ে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। এতে আমাদের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা চা ফ্যাক্টরি আবারও চালু করা প্রয়োজন। তাহলে আমাদের পরিবহন খরচ কমে লাভ আরও বেশি হবে,’বলেন তিনি। পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কিসামত নিজজমা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা কপর উদ্দিন বলেন, ‘২০১৮ সালে বাংলাদেশের চা বোর্ডের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমি তিন একর জমিতে চা চাষ শুরু করি।’ ‘প্রতি একর জমি থেকে প্রতি মাসে গড়ে ১৫০০ কেজি চা পাতা উৎপন্ন করি। প্রতি কেজি গ্রিন চা পাতা ২১ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরে পঞ্চগড়ের একটি চা প্রসেসিং ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করছি,’ জানান তিনি। জেলায় এখন শতাধিক কৃষক চা চাষ করছেন। গড়ে প্রতি মাসে এক একর জমি থেকে কৃষকরা ১৫০০ কেজি গ্রিন চা পাতা সংগ্রহ করতে পারছেন। বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক (হাতীবান্ধা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আরিফ খান বলেন, লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় সমতল ভূমিতে আশাতীত চা উৎপন্ন হচ্ছে, যা চা বোর্ডকে বিস্মিত করেছে। এ অঞ্চলের মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগি। চা চাষের প্রসারে কৃষকদের শ্যালো মেশিনসহ চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে সরবরাহ করে সহায়তা দিচ্ছি। এছাড়াও কৃষকদের বিনামূল্যে কীটনাশক ও ছায়া গাছের চারা বিতরণ করা হয়। ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল ব্যানারে চা বাগানের পরিচর্যা ও কর্তন বিষয়ে কৃষকদের সবসময় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ স্কুলের মাধ্যমে চা চাষে ধারণা নিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে চায়ের ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।