নওগাঁ মান্দায় আত্রাই নদীর পাড় জুড়ে উঠেছে অস্থায়ী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি হাঁসের খামার। কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমে খামারিরা আসে আত্রাই নদীতে হাঁস পালন করতে, নদীর তীরে তৈরি করেন ঢং ঘরসহ হাঁস রাখার ঘের, রান্নার জন্য যাবতীয় কিছু এনেছেন সঙ্গে করে, রাতের বেলা জ্বলে সৌর বিদ্যুত। কথা হয়েছিলো নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে হাঁস পালন করতে মান্দা উপজেলায় প্রসাদপুর ইউনিয়নের বুড়িদহ নামক স্থানে আত্রাই নদীতে আসা আসাদুজ্জামান জামরুলের সঙ্গে। তিনি জানান তার হাঁস পালনের কথা, মূলত অন্য একজনের মোবাইলে ইউটিউবে দেখে হাঁস পালন আগ্রহী হন। আর তার পরেই ১ হাজার বাচ্চা সংগ্রহ করে শুরু করেন খামার। প্রথম বারের ১ হাজার বাচ্চার মধ্যে ৭শত বাচ্চা মারা যায়, বেঁচে থাকে মাত্র ৩শত বাচ্চা। নিজেকে শক্ত রেখে এরপর ডিমের জন্য ২২০টি হাঁস কেনেন তিনি এর পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জামরুলকে। তিনি বলেন, খামার ব্যাবসার আগে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছে এবং সেই সাথে অনেক লসও করেছে তিনি।কোন রকমে মাধ্যমিকের গন্ডি পার করেই ইতি টানতে হয় পড়াশোনার। তার একমেয়ে, সে এবার এসএসসি দেবে। তবে হাঁস পালন করে এখন অনেক ভালো আছেন জানান আসাদুজ্জামান জামরুল। ইচ্ছে এখন মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করা সেই সাথে সরকারি সহয়োগিতা পেলে তার খামার বড় করে ডিম ও মাংস উৎপাদন করে দেশের উন্নয়ের আরো বেশি অবদান রাখা। আত্রাই নদীতে আসার আগে তিনি ছিলেন, নওগাঁর পৌরশা উপজেলায়, সেখান থেকে মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের থানতলায়,এরপর আত্রাই নদীর বুড়িদহে। এখন আসাদুজ্জামান জামরুলের ভাসমান খামার দেখা শোনার জন্য দুইজন শ্রমিক কাজ করে। তারাই সব দেখাশোনা করে থাকে। নদীতে হাঁসভাসানো থেকে শুরু করে হাঁস ঘেরে ঢুকানো,খাবার দেওয়া, ডিম সংগ্রহ ও বিক্রয়। এখন জামরুলের খামারে হাঁসের সংখ্যা ১০৩৫টি প্রতিদিন ধান,গম,ফিড সবমিলে ৩ মন খাবার লাগে। এভাবে স্থান পরিবর্তন করলে কিছু দিন ডিমের উৎপাদন কম হয়। প্রতিদিন ৬৫০থেকে ৭০০ ডিম না পেয়ে লসে পড়তে হবে তাকে। আসাদুজ্জামান জামরুল আরও জানান, নদীতে হাঁসের রোগ বালাই কম হয়। আর যদি কোন হাঁস রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তারা নিজেরাই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। প্রাইভেট ডাক্তার ডাকলে অযথা বিল বেশি করেন আর সরকারি ডাক্তারের দেখা ও ওষুধ পাওয়া দুরলর্ভ বলেও অভিযোগ করেন। তাই আমরা যা জানি তাই ভরসা। পানি বৃদ্ধি পাওয়া পর্যন্ত নদীতে থাকবেন তারা। খামার নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর কারণে স্থানীয়রা তার এই খামারকে ভাসমান খামার বলেন। আর এই ভাসমান খামারের হাঁস প্রাকৃতিক খাবার খায় বেশি বলে এটি লাভ জনক মনে করছেন খামারিরা। জামরুলের মত আরো ভাসমান হাঁসের খামারী আত্রাই নদীতে এসেছেন। তারাও হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাদের নদীতে হাঁস পালন দেখে অনেক বেকার যুবকই এখন ঝুঁকছেন দেশি হাঁসের খামারের দিকে। উপজেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বেশ কিছু দেশি হাঁসের খামার। এবিষয়ে মান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমান্য চন্দ্র বলেন, ‘মান্দা উপজেলায় ছোট-বড় সব ধরনের খামার আছে। করোনাকালিন বেকার ও কর্মহীন হয়ে যাওয়া যুবকদের উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামার বাড়াতে চেষ্টা করছি। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে এসব খামার দেখভালের কাজ করছেন আমাদের কর্মীরা। নতুন খামারি ও নদীর পাড়ে আসা ভাসমান খামারিদের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।