চিকিৎসক সংকটে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এক্ষেত্রে বার্ন ওয়ার্ডে গত কয়েকমাস ধরে কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া না হলেও পুড়ে আসা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে সার্জারি ওয়ার্ডে। আর যেসব রোগীদের অবস্থা একটু সংকটাপন্ন তাদের উন্নত চিকিৎসার নামে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঢাকাতে। এ অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মার্চ মেডিক্যালের নিচতলার পূর্বদিকে আটটি বেড নিয়ে বার্ন ইউনিটের পথচলা শুরু হয়। নারী ও পুরুষ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে সেখানে আট চিকিৎসক, ১৬ নার্স ও ব্রাদারের পদ রাখা হয়। এরপর ওই ওয়ার্ডটিকে ১০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও রোগীদের চাপ সামাল দিতে ৩০ থেকে ৩২টি বেড সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ। এদিকে পদ যাই রাখা হোক শুরু থেকেই ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান ডা. এম এ আজাদ সজল। এরপর সেখানে সহযোগী অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেনকেও দেওয়া হয়। তবে গেল মার্চ মাস থেকে চিকিৎসাজনিত ছুটিতে চলে যান সহযোগী অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন। তিনি এখনও ছুটিতে রয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে গত ২৬ এপ্রিল সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান ডা. এম এ আজাদ সজলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ার পর ওয়ার্ডটি চিকিৎসক শূন্য হয়ে পড়ে। তারপর মে মাসের শেষ পর্যন্ত অন্য ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের সহায়তায় অভিজ্ঞ নার্সদের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান ছিল। কিন্তু বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ছাড়া এভাবে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কষ্টকর হয়ে উঠলে জুন মাসের শুরুর দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ডটিতে রোগী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেসঙ্গে পুড়ে আসা রোগীদের সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল শেবাচিম হাসপাতলের সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের সহায়তায়ই আগুনে ও এসিডে পুড়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষত্রে গুরুতরদের পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সাবেক ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ ব্রাদার লিংকন জানান, বার্ন ওয়ার্ডটি হাসপাতালের বর্তমান পরিচালকের অক্লান্ত পরিশ্রমে একটি বিশেষায়িত ওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। এ ওয়ার্ডের মধ্যেই দু’টি আলাদাভাবে নারী ও পুরুষ রোগীদের যেমন রাখা সম্ভব, তেমন ওয়ার্ডের মধ্যেই অপারেশন থিয়েটারের ব্যবস্থাসহ রোগীদের চিকিৎসাসেবায় আধুনিক নানা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সংগ্রহ এখানে রয়েছে। সজল স্যার থাকাকালীন সময় নিয়মিত অপারেশন ও রোগীদের দেখভাল করা হতো। তখন ১০ শয্যার ওয়ার্ডটিতে গড়ে ৪০ জন রোগী থাকতো প্রতিদিন। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে এখন ওয়ার্ডটিতে রোগী ভর্তি বন্ধ থাকায় দায়িত্বরত নার্স, ব্রাদার ও কর্মচারীরা রুটিন মাফিক মালামাল পাহাড়ার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ওয়ার্ডে বর্তমানে দায়িত্বরত স্টাফরা জানান, দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগের আর কোথাও বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ নেই। শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ডটিও চালু না থাকায় অগ্নিদগ্ধ রোগীরা মারাত্মক দুর্ভোগে আছেন। তাদের ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যেতে হচ্ছে। হতদরিদ্ররা ঢাকায় না যেতে পারায় তাদের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন রোগীর স্বজনরা আসছেন ওয়ার্ডটি চালু হয়েছে কিনা জানতে। এ বিষয়ে ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ কুমার হালদার বলেন, আমরা রোগীদের সেবা দিতে চাই। আশা করি, দ্রুত প্রফেসরসহ মেডিক্যাল অফিসার যারা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির ওপরে ট্রেনিংপ্রাপ্ত তাদের যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, বার্ন ইউনিটটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজন। শেবাচিম ইউনিট আছে কিন্তু এখন চিকিৎসকদের পদায়ন প্রয়োজন।