![Daily Nabochatona](https://dailynabochatona.com/wp-content/uploads/2023/01/31BwAd3.png)
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। আজ রোববার রাতেই এই ঘূর্ণিঝড় রেমাল সাতক্ষীরাসহ দেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ সব এলাকায় ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে রেমালের প্রভাব। দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সব প্রস্তুতি নিলেও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে আছেন সাতক্ষীরার উপকূলের বাসিন্দারা। তাদের আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানলে বাঁধ ভেঙে আবারও তাদের এলাকা প্লাবিত হবে। জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ তাদের এ আশঙ্কার কারণ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টিরও অধিক পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শ্যামনগর এলাকার মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টেঁকসই বেড়িবাঁধ। এরপরও এখনো টেঁকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে দুর্যোগ এলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর। একই উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়নের শংকর মন্ডল বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে সেসব এলাকার মানুষের। গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, চারপাশে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদী বেষ্টিত তার ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের গাবুরা, নাপিতখালী, জেলেখালী, তিন নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো- ১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান-অশনির পর জেলার অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। আপাতত নদী ভাঙ্গনের কোন সমস্যা নেই। তবে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি যেন ছাপিয়ে বাঁধের ভেতরে ঢুকতে না পারে সেজন্য একাধিক টিম কাজ করছে। আর যেসব জায়গাতে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক, সেখানেও সংস্কারের কাজ চলছে। আর এছাড়াও আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ করে রেখেছি। যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বর্তমানে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ আছে তা পরিবর্তন না হলে আপাতত ঘূর্ণিঝড় সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালীর উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব শেল্টারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণ কার্যে ব্যবহারের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানি। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ড। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এই মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। তারপরেও আমাদের উপকূলীয় শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা সবাই যেন নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে, ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, খাওয়ার পানি মজুদ রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।