চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপ প্রবাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রোগীদের সীমাহীন দূর্ভোগ, বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট জতিন রোগ। শিশু রোগীর সংখ্যা ৪দিনে ভর্তি ২৯৪ জন। এছাড়াও গরমজনিত কারণে বেড়েছে বয়োবৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেহাল অবস্থা। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী সাধারণকে। গত দু’দিন চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অসহনীয় গরমে নাকাল মানুষ, স্বস্তি মিলছে না কোথাও। তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশী অসহায় হাসপতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। এদিকে রোগের কারণে শরীরে যন্ত্রণা, অন্যদিকে চিকিৎসা নিতে এসে গরমের মধ্যে আউটডোরে লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন রোগীরা। সবথেকে বেশী কষ্টপাচ্ছে ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা শিশু-বয়োবৃদ্ধরা গরমে যেন হাপিঁয়ে যাচ্ছেন। গতকাল রবিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্র। এপ্রিল মাসজুড়ে দাবদাহ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান। তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বৃদ্ধি পেয়েছে ডাইরিয়া ও শিশু রোগীর সংখ্যা। অন্যদিকে গরমের কারণে অন্য রোগীর চাপ রয়েছে বহিঃবিভাগেও। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ডায়রিয়া ও শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে শিশুর জ্বর, ঠান্ডা, ডায়রিয়া রোগীও রয়েছে। এছাড়া গরমের কারণে অসুস্থ হর্য়ে বয়োবৃদ্ধরাও চিকিৎসা নিচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ দিনে অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল রাত ৮টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডের মোট ভর্তি হয়েছে ১০৭ শিশু রোগী। এর মধ্যে অধিকাংশ শিশু জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে আক্রান্ত। অপরদিকে ৪ দিনে অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল রাত ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধসহ মোট ১৮৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গতকাল রোবার রাতে সদর হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, দুই ওয়ার্ডের কানায় কানায় পূর্ণ রোগী। তীব্র গরমে রোগীদের হাসফাঁস অবস্থা। ফ্যানের বাতাস যেন তাদের গায়েই লাগছে না। অনেকেই হাত পাখা কিংবা টেবিল ফ্যান নিয়েছেন। কয়েকজন রোগীর স্বজনরা বলেন, তীব্র গরমে হাসপাতালে থাকায় যাচ্ছেনা। যদিও চাহিদার তুলনায় হাসপাতালে ফ্যানের সংখ্যা কম। বাতাস যেন গরম হয়ে বের হচ্ছে। শিশুরা গরমে ছটফট করছে। রোগী এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ কারণে আরও গরম বেশি লাগছে। এ ছাড়া হাসপাতালের সর্বত্র নোংড়া ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থা। এতে করে একেতো গরম তারপর দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাথরুম গুলোর অবস্থা আরও খারাপ। বাথরুমগুলো অপরিচ্ছন্নতার কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে। সরকার যেখানে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেখানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার চিত্র ভিন্ন। হাসপাতালের স্টোর কিপার হাদিউর রহমান হাদি বলেন কলেরা স্যালাইন ও খাওয়ার স্যালাইনের কোন ঘাটতি নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, তাপ প্রবাহের কারণে সদর হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বড়ছে। জ্বর, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। এ গরমের মধ্যে শিশুদের সুরক্ষায় যথাসম্ভব বাসায় রাখায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রচণ্ড রোদ ও গরমে শিশুদের যথাসম্ভব বাসায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কোনোভাবেই তাদের বাইরে বের করা না হয়। কারণ, গরমে বাচ্চারাই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাইরে বের হলে অবশ্যই বাসা থেকে বিশুদ্ধ পানি নিতে হবে, প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। যত্রতত্র পানি বা রাস্তার পাশের খোলা জুস, শরবত বা আইসক্রিম শিশুদের খাওয়ানো যাবে না। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বাসায় পানি ফুটিয়ে, এরপর ফিল্টার করে পান করা নিরাপদ তীব্র গরমের এ সময়ে শিশুদের ঘাম যেন গায়েই না শুকায়, ঘামটা যখন তাদের শরীরে শুকায় তখনই বাচ্চাদের সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এ জন ঘাম হলে সাথে সাথে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। পাশাপাশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। অনেকই গরমের কারণে বেশি পারিমাণ ঠান্ডা পানি ও কোল্ড ড্রিংকস পান করেন। এগুলোও অসুস্থতার বড় কারণ। এগুলোর মাধ্যমে জ্বর-সর্দি ও কাশি বেড়ে যায়। এমন অসংখ্য রোগী আমরা নিয়মিত পাচ্ছি। তাই ঠান্ডা জাতীয় কিছু খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার সার্বিক অবস্থা খুবই খারাপ। দূর্ভোগের শিকার এ জেলার সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিনের দূর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর আশু সহযোগিতা কামনা করেছেন এ জেলার অভিজ্ঞমহল।