![Daily Nabochatona](https://dailynabochatona.com/wp-content/uploads/2023/01/31BwAd3.png)
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নিজ ঘরে দিপালী রাণী (৪২) নামে এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় নিহতের স্বামী শ্যামা চন্দ্র দাসকে (৪৮) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় তিনি হত্যাকারীকে শনাক্ত করে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন স্বজনদের কাছে। সেই ঘটনার ভিডিও বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এসে পৌঁছেছে। এর আগে, শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে বন্দর উপজেলার লেজারস এলাকায় ভাড়া বাড়ি থেকে দিপালী রাণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পাশে শুয়ে থাকা স্বামী শ্যামা চন্দ্র দাসও জখম হয়েছেন। তার গলায় ও শরীরে ছুরিকাঘাতের ক্ষত রয়েছে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় নিহতের স্বজনরা জানান, আহত শ্যামা চন্দ্র দাস তাদের জানিয়েছেন বাড়ির কেয়ারটেকার ফরিদা বেগম তাদের মেরেছে। তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও রেকর্ড রয়েছে। সেই ভিডিওতে আহত শ্যামা চন্দ্র দাসকে বলতে শোনা যায়, ‘রাতে বাড়ির পাশে বিয়ের অনুষ্ঠানে যায় আমার দুই মেয়ে মলি ও অথৈ। এই সুযোগে রাত তিনটার দিকে বাড়িওয়ালার বোন ও কেয়ারটেকার (ফরিদা বেগম) আমার বুকে এসে থাবা দিয়ে ধরে। পরে চাকু দিয়ে এই কাজ করেছে। বিছানার নিচে চাকু রেখে দিয়েছে।’ বিরোধের কারণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘টাকা দিই না বলে বাড়িওয়ালার বোন প্রায় সময় আমাদের বকাঝকা করতো। বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য থ্রেট (হুমকি) দিতো।’ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহতের মেয়ে মলি দাস বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে পাশের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমি ও ছোট বোন অথৈ বিয়েবাড়িতে যাই। সে কারণে ঘরের বাইরে দিয়ে ছিটকিনি লাগিয়ে চলে যাই। রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে বাড়িতে ফিরে বাতি না জ্বালিয়ে দুই বোন খাটে ঘুমিয়ে পড়ি। আর বাবা-মা প্রতিদিনের মতো নিচে বিছানা পেতে শুয়েছিল। শুক্রবার সকাল ৮টায় ঘুম ভাঙলে উঠে দেখি মায়ের রক্তমাখা নিথর দেহ পড়ে রয়েছে । তার শরীরে অনেকগুলো কোপের ক্ষত রয়েছে। এর পাশেই বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল। কাছে গিয়ে দেখতে পাই তার নিশ্বাস চলছে। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এখনও সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।’ হত্যার সঙ্গে বাড়ির কেয়ারটেকার জড়িত রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই বাড়ির বাড়িওয়ালার বোন ফরিদা বেগম কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার সঙ্গে প্রায় সময় মায়ের ঝগড়াঝাঁটি হতো। কিছুদিন আগেও রান্না করা নিয়ে তার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘর ভাড়ার টাকা নিয়েও ঝগড়া হয়েছে। তবে তাদের সব ভাড়া আমরা ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছি। এই ঝগড়ার রেশ ধরে ফরিদা বেগম ও তার স্বামী মিলে আমার মা-বাবাকে কুপিয়েছে। মা বাড়িতে মারা গেছেন। আর বাবা হাসপাতালে আহত অবস্থায় এই ঘটনার কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমি আমার মায়ের খুনিদের বিচার চাই।’ জানা গেছে, নিহত দিপালী রাণী ওই এলাকার কাউসার মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। তিনি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তার স্বামী আহত শ্যামা চন্দ্র দাস পেশায় একজন চর্মকার। তাদের সংসারে চার মেয়ে। তাদের মধ্যে বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আর ছোট দুই মেয়ে তাদের সঙ্গে একঘরে বসবাস করেন। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন বাড়িওয়ালার বোন ও বাড়ির কেয়ারটেকার ফরিদা বেগম এবং তার ছেলে সিয়াম। ঘটনাটিকে রহস্যজনক বলছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন বাংলা বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই রহস্যজনক। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তার তদন্ত চলছে। ঘটনার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও গভীর তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত শেষে প্রকৃত দোষীকে শনাক্ত করা বের করা হবে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে।’