
রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ স্থানে কয়েক মাস ধরেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ১২ কেজির তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
চলতি মাসের শুরুতে এলপি গ্যাসের দাম কমানোর দুই সপ্তাহ পার হলেও অনেক জায়গায় আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি। ভোক্তারা বলছেন, যথাযথ তদারকির অভাবে এলপিজিতে এখনও ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ চলছে। যে যার খেয়াল-খুশি মতো দাম নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২ মার্চ এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ভোক্তা পর্যায়ে এলপি গ্যাসের ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৭৬ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৪২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ৪৯৮ টাকা।
প্রতি মাসেই বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দিলেও তাতে তোয়াক্কা করে না খুচরা বিক্রেতারা। তবে যে মাসে দাম বাড়ে তখন নির্ধারিত সময়ের আগেই দাম বাড়াতে এক মুহূর্তও দেরি করেন না ব্যবসায়ীরা। আবার যে মাসে দাম কমানো হয় তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দামে গ্যাস বিক্রি করেন। গুটিকয়েক খুচরা বিক্রেতা ছাড়া প্রায় সব বিক্রেতাই ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রিতে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা শাহিন এন্টারপ্রাইজ নামে এক এলপিজি বিক্রেতাকে গ্রাহক পরিচয়ে ফোন দেওয়া হলে তিনি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৫০০ টাকা চান। এ ধরনের বেশকিছু খুচরা বিক্রেতার নাম্বারে গ্রাহক পরিচয়ে ফোন দিলে অধিকাংশই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০-২০০ টাকা বেশি চান।
এলপিজি বেশি দামে বিক্রি করায় ক্ষুব্ধ ভোক্তারা। রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা শাহিনুর বলেন, সরকার সিলিন্ডারের দাম কমালেই কি, আর না কমালেই কি? আমরা তো ওই দামে সিলিন্ডার পাই না। খবরে শুনলাম সিলিন্ডারের দাম ১৪২২ টাকা করছে। কিন্তু আমাদের কাছে ১৬০০ টাকা করে নিচ্ছে। আবার যখন দাম বাড়ে তখন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আরও দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা তো কিনতে বাধ্য। সব স্বেচ্ছাচারিতা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সাথেই চলছে।
খিলগাঁও এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ৯ মার্চ আমি ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনি। আমার কাছে ১৫৫০ টাকা নিয়েছে। সিলিন্ডারের দাম ১৪২২ টাকার কথা বললে তারা জানায় ১৫৫০ টাকার নিচে দিতে পারবে না।
সিলিন্ডারের এই মূল্য বেশি নেওয়াকে ‘লুণ্ঠনমূলক কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিইআরসির নির্ধারিত দামের চেয়ে যে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে, এগুলো হচ্ছে লুণ্ঠনমূলক কর্মকাণ্ড। তারা সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে। আবার ভোক্তার কাছ থেকে বাড়তি দাম নিয়ে লুণ্ঠন করছে। সরকার-নির্ধারিত মূল্য টানিয়ে রেখে বেশি দাম নিচ্ছে- এটাও জালিয়াতি এবং ফৌজদারি অপরাধ। এসব বিষয়ে বিইআরসি ও ভোক্তা অধিকার সবারই তদারকি বাড়ানো উচিত। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়া উচিত। তারা নির্দিষ্ট প্রমাণসহ এসব বিষয়ে মামলা করতে পারে।
২০২১ সালের ১২ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত এলপিজির দর ছিল কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন। ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন বলা হয়, আমদানি-নির্ভর এই জ্বালানির দাম নির্ধারণে সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে। ফলে সৌদির দর ওঠানামা করলে ভিত্তিমূল্যও ওঠানামা করবে। তবে এ ক্ষেত্রে অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। সেই ঘোষণার পর থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি।