২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই আমাদের সোনার বাংলা গড়া বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) গাজীপুরের মৌচাকে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্কাউট-ই নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দেয়, এতে আধুনিক সৃজনশীল গুণাবলী বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। পরোপকারী হিসেবে সমাজ সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমারি করোনায় তাদের আন্তরিকতা আমরা দেখতে পেয়েছি। এই স্কাউট আন্দোলন আরও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠুক।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার মনে পড়ে আমার ছোট ভাই শেখ রাসেলকে, মাত্র ১০ বছরে যাকে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছে। তোমাদের মাঝেই আমি শেখ রাসেলকে খুঁজে পাই। আমি চাই, আমাদের দেশের আজকের শিশু-কিশোরদের জীবন নিরাপদ হোক, সুন্দর হোক, অর্থবহ হোক। তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। আজকের শিশুরাই আগামী দিনে বাংলাদেশের কর্ণধার হবে। আমি চাই, আমাদের দেশটা আরও চমৎকারভাবে গড়ে উঠুক। যেখানে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ স্থান পাবে না। সাম্প্রদায়িকতা বা সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত থাকবে। আজকের শিশু যারা বড় হবে, তারা উদার মন নিয়ে বড় হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গঠন করার কাজ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্কাউট আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্প্রসারণ ও স্কাউটস শতাব্দী ভবন নির্মাণ প্রকল্প চলছে। ৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেট অঞ্চল ও মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউটস ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় আঞ্চলিক স্কাউটস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৩৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে ক্লাব স্কাউট প্রকল্প ব্যস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাব দল গঠন এবং ক্লাব স্কাউট প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌচাকের অনুকূলে ৯৫ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছি। তবে এই ভূমিতে বনায়ন ধ্বংস করা যাবে না। সৌন্দর্য রক্ষা করতে হবে। একটি স্টুডিও নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক সুইমিং পুল নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে রোভার স্কাউটদের জন্য একটি ট্রেনিং স্টেন্টার নির্মাণের লক্ষে ১৮৮ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, দেশের সব জেলা উপজেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমরা নির্মাণ করে দেব। আমাদের লক্ষ্য, দেশের স্কাউটিং সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু, কিশোর ও যুবকদের আত্মনির্ভরশীল ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুটি করে ক্লাব স্কাউট ও রোভার স্কাউট দল করার নির্দেশ দিয়েছি।
দেশের স্কাউট সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিশু কিশোরদের আত্মনির্ভরশীল সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই, প্রত্যেক প্রাইমারি স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত স্কাউটিং হবে। এখন আমাদের ২২ লাখ সদস্য আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সদস্য হবে ৩০ লাখ।
সরকারপ্রধান বলেন, আমার লক্ষ্যটা থাকবে যেন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। সেই ব্যবস্থাটা যেন করা হয়। তাহলে আমি বিশ্বাস করি, আমার দেশ সোনার বাংলা বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে। আমি জানি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের স্কাউট দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। স্কাউট সদস্যরা ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমি আনন্দিত, বাংলাদেশ ২৫তম স্কাউট বিশ্ব জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ করবে আশা করি, বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরি বাংলাদেশে আয়োজন করতে পারবো। এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
এর আগে, সকালে প্রধানমন্ত্রী স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছালে তাকে স্কার্প ও টুপি পরিয়ে সম্মান জানানো হয়। এরপর তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের স্কাউটদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাত, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, বাংলাদেশ স্কাউটের প্রধান জাতীয় কমিশিনার মো. মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।