বিশ্বকাপে মরক্কোর কাছে ২-০ গোলে বেলজিয়ামের হারের পর দেশটির রাজধানী ব্রাসেলসে দাঙ্গা বেধেছে। কেন্দ্রীয় এলাকায় দাঙ্গাবাজদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে জলকামান ব্যবহার ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু এলাকায় যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো চলাচল। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক ডজন দাঙ্গাকারী একটি গাড়ি উল্টে অগ্নিসংযোগ করেছে। বৈদ্যুতিক স্কুটারে আগুন লাগিয়েছে। এ ছাড়া গাড়িতে ইট ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের মুখপাত্র ইলসে ভ্যান ডি কিরে বলেন, কিছু ভক্ত লাঠি হাতে তুলেছিলেন এবং এ সময় এক সাংবাদিক আতশবাজিতে আহত হয়েছেন। ব্রাসেলসের মেয়র ফিলিপ ক্লোজ জনগণকে শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ রাস্তায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। কিছু এলাকায় সাধারণ চলাচল ও ট্রাম যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য।’ খবরে বলা হয়েছে, দাঙ্গাকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ১০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে মোতায়েন করা হয়েছে। সহিংসতা যাতে ছড়িয়ে না পড়তে পারে সেজন্য মেট্রো স্টেশনগুলো বন্ধ এবং রাস্তাগুলো ঘিরে রাখা হয়েছে। রাজধানী ছাড়াও অ্যান্টওয়ার্প শহরেও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। মূলত মরক্কোর অঘটনে স্তব্ধ বেলজিয়াম। অনেক ভক্ত বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। জয় দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল বেলজিয়াম। নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে কানাডাকে হারিয়েছিল তারা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে এসেই মুদ্রার উল্টো পিঠটা দেখে ফেললেন কেভিন ডি ব্রুইনে-ইডেন হ্যাজার্ডরা। হলেন অঘটনের শিকার। মরক্কোর কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করল র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় সেরা দলটি। ২-০ গোলে তারা ধরাশায়ী হলো আফ্রিকান দলটির কাছে। জার্মানি-আর্জেন্টিনার পর এবার অঘটনের শিকার হলো বেলজিয়াম। বেলজিয়াম যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় সেরা দল, মাঠের পারফরম্যান্সে তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকে মরক্কো। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে বেলজিয়ামকে চেপে ধরে র্যাঙ্কিংয়ের ২২ নম্বর দল। এ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, বেলজিয়ানদের সোনালি প্রজন্ম ম্রিয়মাণ। জয় তাদের হাতছাড়া হচ্ছে। বাস্তবে তেমনটাই ঘটেছে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে গোলশূন্য (০-০) ড্র করেছিল মরক্কো। এবার দ্বিতীয় ম্যাচে এসে তারা ছিনিয়ে নিল জয় নামক সোনার হরিণ। আর বেলজিয়াম প্রথম ম্যাচে কানাডাকে হারিয়েছিল ১-০ গোলে। ম্যাচের শুরুতেই দুরন্ত এক ফ্রিকিক থেকে গোলের দেখা পেয়েছিল মরক্কো। কিন্তু অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। শুরুতে গোল দিলেও পরে ভার রিপ্লেতে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। মাঠের পাশে রাখা স্ক্রিনে ভিডিও রিপ্লে দেখে রেফারি গোল বাতিলের আদেশ দেন। বিরতির পরও চলে বেলজিয়ামের আক্রমণ। নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে কেভিন ডি ব্রুইনেদের। তবে গোলের দেখা পেতে তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয় ৭৩ মিনিট পর্যন্ত। বেলজিয়াম নিজেদের রক্ষণদুর্গ ৭২ মিনিট পর্যন্ত অক্ষত রেখেছিল। কিন্তু পরে আর পারেনি। উজ্জীবিত ফুটবলের জয়গান গেয়ে মাঠে নামা মরক্কোর কাছে হাল ছেড়ে দেয় ইউরোপের ফুটবল পরাশক্তি। ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে মরক্কোকে গোল উপহার দেন আবদেলহামিদ সাবিরি। পরে আর কোনো গোল যেন হচ্ছিলই না। ১-০ গোলের জয় উৎসবের স্বপ্নই বড় করে যাচ্ছিল ক্যাসাব্লাঙ্কার ফুটবলাররা। কিন্তু ইনজুরি টাইমে আবারও বেলজিয়াম খেই হারিয়ে ফেলে। মরক্কো পায় নিজেদের দ্বিতীয় গোলের দেখা। ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে (৯০+২ মিনিটে) আফ্রিকানদের আনন্দটা আরও বাড়িয়ে দেন জাকারিয়া আবুখলাল। সঙ্গে বেড়ে যায় জয়ের ব্যবধানটা। ২-০ গোলে জয়ের উৎসবে মাতেন কোচ ডব্লিউ রেগ্রাগুইয়ের শিষ্যরা। এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না বিশ্বকাপ। মরক্কোর কাছে ২-০ গোলে হেরে যাবে বেলজিয়াম—ম্যাচের আগে কেউ এমন মন্তব্য করলে তাকে নিয়ে হাসিমশকরা হতো। কিন্তু পুরো ম্যাচেই যে বেলজিয়ামকে নিয়ে মরক্কো ‘খেলল’। কি ভীষণ অসহায় দেখাচ্ছিল মরক্কোর কাছে এই ম্যাচে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট বেলজিয়ামকে।