চীনের সঙ্গে তুমুল প্রতিযোগিতা চান, কিন্তু কোনো সংঘাত আশা করেন না বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে তুমুল প্রতিযোগিতা চাই, কিন্তু কোনো সংঘাত আশা করি না। বেইজিংয়ের সঙ্গে নতুন করে স্নায়ু যুদ্ধে জড়াতে চায় না ওয়াশিংটন।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেখানে সম্মেলন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই প্রায় ৩ ঘণ্টার বৈঠক হয় এই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিভিন্ন বিষয়ে চলমান বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে কমিয়ে আনতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তারা।
বৈঠক শেষে জানা যায়, দুই পরাশক্তি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন। তাদের এ বৈঠককে কোনো কোনো গণমাধ্যম ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছে।
বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জিনপিংয়ের সঙ্গে এটিই তার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। তবে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাইডেন শপথ গ্রহণের পর দুই নেতার মধ্যে পাঁচবার ফোনে বা ভিডিওতে কথা হয়েছে। তাদের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল যখন বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সে সময় পর্যন্ত তাদের মধ্যে সদ্ভাব ছিল।
বালির বিলাসবহুল হোটেল মুলিয়ার বলরুমে সারি করে রাখা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার সামনে এই দুই নেতা হাসিমুখে করমর্দন করেন। দুজনই এ সময় দুজনের প্রতি খুবই আন্তরিক আচরণ করেন। জিনপিংয়ের পিঠে হাত রেখে বাইডেন বলেন, ‘আপনার সাক্ষাৎ পাওয়া সত্যিই দারুণ।’
পরে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন বাইডেন। সেখানে তিনি চীনের সঙ্গে ব্যক্তিগত এবং সরকারি উভয় পর্যায়ে যোগাযোগের রাস্তা সবসময় খোলা রাখারও প্রতিশ্রুতি দেন। মার্কিন নেতা জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে আরও বলেন, ‘বিশ্ব আশা করছে, দুই দেশ এই সমস্যার সমাধান করবে।’
জবাবে শি জিনপিং বলেন, ‘বিশ্ব যা প্রত্যাশা করে, তাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তেমনটা নয়। তাই চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা প্রয়োজন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য দুই দেশকে সঠিক দিকনির্দেশনা খুঁজে বের করতে হবে এবং সম্পর্ককে উন্নত করতে হবে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘তাদের মধ্যে খোলা ও সৎ কথোপকথন হয়েছে এবং তিনি চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চান না।’ এক প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, ‘চীন উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কি না, তা তিনি নিশ্চিত নন। তবে তিনি বলেছেন, কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটির পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য চীনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে ইউক্রেনের খেরসন শহর পুনরুদ্ধারের প্রশংসা করেছেন। তিনি এটিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইউক্রেনের জনগণের সাহস, সংকল্প এবং ক্ষমতার প্রশংসা করছি।’ চীনের সঙ্গে নতুন শীতল যুদ্ধের আশঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাইডেন বলেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন চীন তাইওয়ানে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে না।’ তিনি পুরোপুরি বিশ্বাস করেন, নতুন কোনো শীতল যুদ্ধ হবে না।’
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে ‘লাল রেখা’ (রেড লাইন) হিসেবে উল্লেখ করে এ নিয়ে মাথা ঘামানোর ব্যাপারে বাইডেনকে সতর্ক করেন জিনপিং।
নবচেতনা / এমএআর