স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) পক্ষ থেকে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হলেও তাতে সায় দেয়নি সরকার। কমিটি ছাড়াই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তদারকি চালিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিনদিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
দিনের প্রথম অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কোভিড পরিস্থিতির কারণে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বৈঠকে অংশ নেন তারা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন কমিটি করা হয় সে প্রস্তাব করেছিলেন। তবে আমরা বলেছি, কমিটি করার প্রয়োজন নেই। ডিসিদের এলাকায় কাজ দেখার অধিকার আছে। আমরা আপনাদের (ডিসি) সঙ্গে ঘনঘন যোগাযোগ করি, চিঠি দিই। সে অনুযায়ী আপনারা কাজ করবেন। আর কিছু প্রয়োজন হলে আমরা তো আছি। আমিও ডিসি ছিলাম। আমি মনে করি কমিটি করার প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট দায়িত্ব ও ক্ষমতা ডিসিদের হাতে আছে। এটাকে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সেজন্য ব্রিটিশ ধারণার যে ইনস্পেকশন, সেটার প্রয়োজন নেই। তারা দেখতে যাবে, ওভার সি করবে, সেটা আরো বেশি করে করার জন্য ডিসি সাহেবদের অনুরোধ করেছি।
বিদ্যমান আইনেই জেলা প্রশাসকদের উন্নয়ন প্রকল্প দেখভালের দায়িত্ব আছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন, আমি ডিসিদের বলে দিয়েছি, এটা তো অলরেডি বিধান আছে। জেলা প্রশাসকরা তাদের এলাকায় যেসব প্রকল্প আছে সেগুলো দেখতে পারেন। দেখা মানে কিন্তু ইনস্পেকশন নয়, ইনস্পেকশন শব্দটা ভয়ঙ্কর। পরিদর্শন অর্থে বলেছি। যাওয়া আসা খোঁজখবর নেয়া। সেটাকে আমরা আন্ডারলাইন করেছি। সরকারি প্রকল্পে বিদেশি ঋণ বোঝাতে ‘সহায়তা’ শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকদের বৈঠকে সচেতন করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘সহায়তা’ শব্দটা যেন সাবধানে ব্যবহার করা হয় সেদিকে আমি আজকে জোর দিয়েছি। এটা শুনলে মনে হয় ‘খয়রাতি’। আসলে সহায়তা সেই অর্থে আর নেই। উন্নয়ন বাজেট সম্পর্কে বলতে পারি- আমরা ঋণ হিসেবে বড় একটা অংশ নিই। সহায়তা মাঝে মাঝে আসে, সেটা ১/২ শতাংশও হবে না। বড় বড় সংস্থা নিজেদের প্রয়োজনেই এগিয়ে আসেন। বৈঠকে সরকারি প্রকল্পগুলোর জন্য ভূমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসকদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ডিসিদের সহায়তা আইনগতভাবেই প্রয়োজন। সেটাকে আমরা হাইলাইট করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক দেরি হয়, তার বড় একটা কারণ ভূমি অধিগ্রহণ। কিছু আইনগত ব্যাপারও আছে। এটাকে আরো দ্রুত করার জন্য তাদের সহায়তা চেয়েছি। তারা সহায়তা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগের একটি আদেশ অনুযায়ী, বিভাগীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ বা আইএমইডির কার্যালয় চালুর সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।
এম এ মান্নান বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আইএমইডির কার্যালয় করার ব্যাপারে আমাদের সরকারপ্রধানের একটা নির্বাহী আদেশ আছে। আইএমইডির স্থাপনা যেন মাঠ পর্যায়ে তৈরি করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা অফিস করবো। সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় প্রধানের সহায়তা চেয়েছি। আইএমইডিকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্ল্যান আছে।
এছাড়া ‘গাছ লাগাও, পশুপাখি হত্যা করো না, নদীর ওপর যে পুলগুলো হয় সেগুলার উচ্চতা যেন যথাযথ থাকে, সোজাভাবে রাস্তা করো’- প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা যেন মেনে চলা হয়, সেই পরামর্শও আমরা দিয়েছি। বিভাগীয় পর্যায়ে আইএমইডির কার্যালয় স্থাপনের ফাইলটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা এখনো এগিয়ে চলছে।