নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে ফের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ ও বিভিন্ন পয়েন্টে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে পুলিশ লটিচার্জ, টিয়ার সেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। শনিবার (৯ জানুয়ারী) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ইপিজেডের সামনে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী -শিমরাইল সড়কে এ ঘটনা ঘটে। অবরোধ ও সংঘর্ষের কারণে সকাল থেকেই ওই সড়কে সকল ধরণের যানচলাচল বন্ধ থাকে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। শ্রমিকদের অভিযোগ, ইপিজেডের কুনতং এ্যাপারেলস লিমিটেড (ফ্যাশন সিটি) কারখানা গত ১০ আগষ্ট হঠাৎ করে দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষনা করে মালিক পক্ষ। সেই বন্ধ বাড়তে বাড়তে চার মাস গত হয়। বন্ধ হওয়ার পর শ্রমিকদের আংশিক বেতন দেয়। গত সাত জানুয়ারি বকেয় বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়নি। সেদিন শ্রমিকরা অন্দোলন করলে ১২ জানুয়ারি বেতন পরিশোধ করা হবে বলে পুলিশ আশ্বস্থ করেছিল। কিন্তু এখন মালিক পক্ষ বলছে আগামী ১৮ জানুয়ারি বেতন দেওয়া হবে। অথচ কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। এতে বেতন পরিশোধ অনিশ্চিত মনে হওয়ায় আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। এদিকে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ-৪ এর সিনিয়র এএসপি আইনুল হক, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান এর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হন। একপর্যায় দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গাছের গুড়ি, বাঁশ ও কাঠের স্তুপ করে সড়কের উপর বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন শুরু হয় শ্রমিক পুলিশ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে পুলিশ লাটি চার্জ, জলকামান ও ছয় রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে শ্রমিকরা। সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। দুপর দুইটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানায়, ফ্যাশন সিটি কারখানায় প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। বকেয়া বেতনের দাবিতে সকাল ৮ টায় আমারা ইপিজেটের ভিতরে কারখানার সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেই। তখন বেপজার পুলিশ ও আনসাররা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করে। পরে আমরা ইপিজেড থেকে বের হয়ে সড়ক অবরোধ করি। কিন্তু পুলিশ লাটি সার্জ করায় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, বেপজা ও শিল্প পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে ১৮ জানুয়ারি ১ মাসের বেতন পরিশোধ করবে। কিন্তু শ্রমিকরা মানছেন না। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী জানান, শ্রমিকদের বেতন ভাতা না দেওয়ার কারণে তারা রাস্তা অবরোধ করে। আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছি। শিল্প পুলিশ-৪ এর সিনিয়র এএসপি আইনুল হক জানান, আগামী ১৮ তারিখে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয় মালিকপক্ষ। তারপরও তারা আবার আন্দোলন শুরু করে। আমরা মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায় করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।