অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ি। এখানে পাহাড়, ঝর্ণা, নদী, আকাশ মিলেমিশে একাকার। এখানকার প্রকৃতির নির্মল ¯পটে দেশী বিদেশি পর্যটক ছুটে আসছে। সবুজে ঘেরা পাহাড়ি এ জনপদ এখন পর্যটকদের পদভারে মুখরিত। পর্যটন স্পট গুলাতে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। ঈদের ছুটিতে শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউস এবং গেস্টহাউসগুলো অনেক আগেই বুকিং হয়েছে। কোথাও সীট না পেয়ে পর্যটকদের শেষ ঠিকানা উপজাতিদের বসত-বাড়ি। অজানা অচেনা অতিথির আশ্রয় মিলছে তাদের ঐতিহ্যবাহি মাচাংঘরে। পাহাড়িদের অতিথি আপ্যায়নে আগন্তুকরাও মুগ্ধ। পর্যটন শহর খাগড়াছড়ির ছায়া ঢাকা মায়া ভরা গ্রামগুলোতে এখন প্রতিদিন পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলা বসছে। কেউ আবার বেড়াতে এসেও হোটেল-মোটেলে সীট না পেয়ে জেলা শহর থেকে উপজেলা শহরগুলোর পর্যটন স্পটের কাছাকাছি হোটেল অথবা পরিচিত জনদের ঠিকানায় অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছে।
খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্পটগুলো হচ্ছে- খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অদূরেই অবস্থিত আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত। এ পাহাড় চূড়ায় বসে এক পলকে পুরো খাগড়াছড়ি শহরের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যাবে। তখন আপনার ক্ােছ মনে হবে আপনি নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুতে অবস্থান করছেন। কারণ খাগড়াছড়ির মতই নেপাল শহরটি পাহাড় ঘেরা নির্মল পরিবেশে অবস্থিত। খাগড়াছড়ির এ দৃশ্য অনেকের কাছে কল্পনার দার্জিলিং হিসেবে খ্যাত। আলুটিলা পাহাড়ের নিচেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে দেখতে পাবেন রহস্যময় কৃষ্ণ কালো গুহা। যেখানে মশাল জ্বালিয়ে যেতে হয়। এর এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বেড়িয়ে আসার পথে আপনাকে নিজে যাওয়া হবে রহস্যের অন্য কোন ভূবনে। এ গুহার নিচে স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা, মাথার কাছে বাদুরের ঝাক আরও কত কিছু…। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রিসাং ঝর্ণা, এই ঝর্ণাধারায় অনবরত ঝর্ণা ধারা ঝরঝর শিরশির বইছে; আর হাতছানিতে আপনাকেই ডাকছে। এখানে গোসলটাও সেরে নিতে পারেন। অনুমতি সাপেক্ষে শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত সেনাবাহিনীর রিজিয়ন কর্তৃক সৃষ্ট গিরী সোভা হ্রদকে ঘিরে গড়ে ওঠা নান্দনিক সাজে সজ্জিত নতুন পর্যটন কেন্দ্র সত্যি আপনাকে অন্য ভূবনে নিয়ে যাবে। খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেবতা পুকুর, পথে দেখা মিলবে পাহাড়ে পাহাড়ে উপজাতিদের সৃজিত জুম ধানের ক্ষেত, এখানে আসার পথে মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমা উপজাতির ঐতিহ্যবাহী ও বৈচিত্রময় জীবনধারা দেখা যাবে, শহরের প্রবেশমূখে রয়েছে নব নির্মিত আনসার ও ভিডিপির নান্দনিকতার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হেরিটেজ পার্ক, এখানে বসে এঁকে বেঁকে বয়ে যাওয়া চেঙ্গি নদী, উঁচু ঢেউ তোলা পাহাড়, দূরের নিল আকাশে সাদা মেঘের খেলা দেখার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। যা পর্যটকদের জন্য নতুন সংযোজন। খাগড়াছড়ি শহরের মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র্রকে ঘিরে হরেক রঙের ফুল,ফলজ, বনজ ও ভেষজ বাগান, পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ছোট্ট একটি হ্রদ ও লোহার ব্রিজ। খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা থেকে একটু ভিতরে রয়েছে এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তর বৌদ্ধমূর্তী। এই মূর্তীকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা বিশাল আয়তনের অরণ্য কূটির আপনাকে নিয়ে যাবে চীন, জাপান, কোরিয়ার মত মঙ্গোলীয়ন কোন অএকদেশের বুড্ডিস জগতে। পানছড়ি উপজেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে তবলছড়ি ঝর্ণাটিলা। এখানে একটি পাহাড় ছড়ায় ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহমান স্বচ্ছ পানি, কয়েকটি ঝর্ণা ও বিরাশি টিলার গায়ে আদা-হলুদ, কচু, বিভিন্ন সবজিসহ জুম চাষ দেখার সুযোগটি বেশ ব্যতিক্রম। এখানে গামারি, সেগুনসহ বিভিন্ন ফলজ, বনজ পাহাড়ে হরেক রকম পাখ-পাখালি ছাড়াও বন্য শুকুর, বন্য বানর, বন্য হরিণের হাক-ডাক আনাগোনার দৃশ্যটিও কি কম ব্যতিক্রম? এছাড়াও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে একটি বিশাল ঝর্ণা আবিস্কৃত হয়েছে। যা দেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা বলা হচ্ছে। ওদিকে মাটিরাঙ্গার ১০ মাইল এলাকায় শতবর্শী বটবৃক্ষ, রামগড়ের বিডিআরের জন্মস্থানকে ঘিরে গড়ে ওঠা নতুন ঝুলন্ত ব্রিজ ও লেক দেখার মত একটি স্থান। ্এখানে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ব বিষয় রামগড় উপজেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট পাহাড়ি ফেনী নদীর ওপারেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য অবস্থিত। যা কাঁটা তাঁরের বেড়া দ্বাড়া পরিবেষ্ঠিত। দেশের মানচিত্রে গ্রথিত ও প্রায় চিকন একটি দাগের মত সংযুক্ত স্থানটিই হচ্ছে রামগড়। এই রামগড় সীমান্ত ঘেষে রয়েছে বিশাল আকারের একটি চা বাগান সেখানেও আপনারা হারিয়ে যেতে পারেন। যে কোন সময়ে, যে কোন মূহুর্তে…