বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শত বছরের পুরনো উলানিয়া জমিদার বাড়ি ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয় বাকলা তথা চন্দ্রদ্বীপের এই অঞ্চলটা এককালের পূর্তুগীজ-আরাকন-ফিরিঙ্গী-বর্গী-মগ জলদস্যুদের অভয়ারন্য ছিল। বিভিন্ন সময় এসব জলদস্যুদের মুঘল সেনাপতি শাহাবাজ খাঁ, আগা মেহেদী প্রমুখ তাদের পরাক্রমশালী সেনাবাহিনী নিয়ে অভিযান চালায়। এই অঞ্চলের পূর্ববর্তী নাম শাহাবাজপুর এবং বর্তমান নাম মেহেন্দিগঞ্জ তাদের স্মৃতি এবং বিজয় স্মারক। ধারাবাহিকতায় উত্তর শাহাবাজপুর তথা আজকের মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা অঞ্চলে অবস্থান নেয়া হার্মাদ-মগ-বর্গী দস্যুদের বিতাড়িত করতে মুঘলদের স্থাপিত সংগ্রাম কেল্লায় (সম্ভবত আগা মেহেদীর সময়ে স্থাপিতঃ বর্তমান ভোলা জেলার অর্ন্তগত রামদাসপুর গ্রামে অবস্থিত সংগ্রাম কেল্লাটি আঠার শতকের মাঝামাঝি সময়ে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়) অবস্থান করেন শায়েস্তা খাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি শেখ মোহাম্মদ হানিফ। তিনি স্থানীয়দের সহযোগিতায় তার সৈনিকদের নিয়ে হার্মাদ-মগ-বর্গীদের আক্রমন করেন। পরপর আক্রমনে এসব দস্যুরা চিরতরে নিস্তেজ হয়ে যায়। বীরত্বের পুরস্কার স্বরূপ শায়েস্ত খাঁ শেখ মুহাম্মদ হানিফকে সংগ্রাম কেল্লা এবং অঞ্চলের সুবেদার নিয়োগ করেন। শেখ হানিফ সংগ্রাম কেল্লা থেকে একটু দূরে সরে কালিগঞ্জের কাছাকাছি উলুবন আবাদ করে বসতি স্থাপন করে। এই উলুবনই পরবর্তীতে উলানিয়া নামে প্রসিদ্ধ হয়। উলানিয়ার সন্তান বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, উলানিয়ার একসময় নাম ছিল দীঘিরহাট। জনসাধারণের ওযু গোশলের সুবিধার্থে তারা নিজ উদ্যোগে বিশাল দীঘি খনন করেন। আর এ দীঘির পাড়ে হাট বসত। উলানিয়া জমিদার বাড়ির তিন কামরা বেষ্টিত মূল ভবনটা শেখ হানিফের সময়েই নির্মিত। সামনে সু-বিশাল দীঘি, বাড়ির পিছনদিকে এবং পাশে বেশ কয়েকটা পুকুর, শানে বাঁধানো ঘাট। মূল বাড়ির পাশে কাচারি বাড়ির সামনে ডাকবাংলা মূল বাড়িতে ঢুকতে দ্বীতল প্রবেশ পথ। সবমিলিয়ে এই বাড়িটা ঘিরে এই অঞ্চলে প্রচলিত আছে নানান রকম কিংবদন্তী লোককথা। স্থাপনাটি বর্তমান সরকার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের এই ঘোষণা বাস্তবায়ন করে প্রাচীন এই ঐতিহ্য সমুন্নত রাখা হোক।