১৯ বছর ধরে বন্ধ উত্তরবঙ্গের ২টি রেশম কারখানা এর মধ্যে একটি রাজশাহী ও অপরটি ঠাকুরগাঁও জেলায় অবস্থিত। এর মধ্যে রাজশাহীর রেশম কারখানাটি সম্প্রতি চালু হলেও এখনো বন্ধ ঠাকুরগাঁও জেলার রেশম কারখানাটি । বন্ধ থাকা রেশম কারখানাটি শিগগিরই চালু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম। এদিকে ওপর মহল আশ্বাস দিলেও হতাশায় দিন কাটছে এর শ্রমিক ও রেশম চাষিদের। ঠাকুরগাঁও জেলা রেশম কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত ও সংস্কারের অভাবে কারখানায় দেয়াল সহ বিভিন্ন দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। মেশিন সহ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রয়েছে অকেজো অবস্থায়। ঠাকুরগাঁও জেলা রেশম বোর্ডের তথ্যমতে, ক্রমাগত লোকসানের ফলে ২০০১ সালের ডিসেম্বরের দিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঠাকুরগাঁও জেলায় এই রেশম কারখানাটি। এরপর থেকে আর চালু হয়নি এটি। ফলে কারখানাটির ১৩৪ জন শ্রমিক ও প্রায় ১০ হাজার রেশমচাষি বেকার হয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি পুনরায় স্থাপন ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই) করার পরও কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ সালে আরডিআরএস নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ঠাকুরগাঁও জেলায় দুরামারি নামক জায়গায় (বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরীতে) এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৮১ সালে কারখানাটি রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কারখানাটি গত ২৬ বছরে পর্যায়ক্রমে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান দেয়। এই লোকসানের অজুহাতে ২০০১ সালে কারখানাটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। যার ফলে এতে কর্মরত ১৩৪ জন শ্রমিক ও প্রায় ১০ হাজার স্থানীয় রেশমচাষি বেকার হয়ে পড়েন। অবশেষে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যাওয়া রেশম কারখানা পুনরায় চালু করার উদ্যোগে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ঠাকুরগাঁও জেলার রেশম বোর্ড চালুর বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি দল কারখানাটি পরিদর্শন করেছিল। কারখানাটি চালু করার আশ্বাস দিয়ে তারা বলেছিলেন, এই রেশম কারখানাটি চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটির ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো সময় এটি চালু হবে। আলী আফজাল, জয়নাল, রুবেল সহ বেশ কয়েকজন রেশমচাষি বলেন, ‘এই রেশম কারখানাটি বন্ধ হওয়ায় আমাদের জীবনটা থমকে গেছে। জানি না কবে আবারো আগের মতো একটু শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারব। এটি চালু হলে আমাদের মতো অনেকেরই এখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তাই অবিলম্বে এটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।’ ঠাকুরগাঁও রেশম বোর্ডের সহকারী পরিচালক সুলতান আলী বলেন, ‘কারখানাটি চালু হলে রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত রেশমচাষিরা পুনরায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। শ্রমিক ও চাষিদের কথা ভেবে অবিলম্বে কারখানাটি পুনরায় চালু করা হলে ভালো হয়। আমরা এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘কারখানাটি চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে একটি চিঠি এসেছে। স্বল্প পরিসরে হলেও চালু হবে এটি।’ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘আমার আশা করছি সামনের বছরের প্রথম দিকেই (জানুয়ারি) চালু হবে কারখানাটি। এটি চালু হলে এই জেলায় মানুষের কর্মসংস্থানের একটি ব্যবস্থা হবে বলে আমরা মনে করি।’