কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্যের জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হতে পারেন বলে মনে করেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ চিকিৎসক বলেন, আমাদের কিছু গোল আছে। যার একটি হচ্ছে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল। এর ফলে দেশের শিশুমৃত্যু হার আর মাতৃমৃত্যু হার কমাতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এর স্বীকৃতি স্বরূপ আর্ন্তজাতিক এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন আমাদের টার্গেট এসডিজি বা সাসটেইনএবল ডেভেলপমেন্ট গোল যার ১৭ টি টার্গেট আছে। জনগনের উন্নত সুন্বাস্থ্য বজায় রাখতে স্বাস্থ্য খাত হচ্ছে এসডিজি’র তিন নম্বর টার্গেট। আবার জনগনের সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থায় ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ নিয়ে ও কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের এ অর্জনে বিশ^ব্যাপি স্বীকৃতি পেয়েছে,নন্দিত হয়েছে। বিভিন্ন সূচকের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে এমডিজি ফোর এ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড, গ্যাভিএ্যাওয়ার্ড ও ওটিজমে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পুরস্কারও পেয়েছে রাষ্ট্র। আমাদের দেশ শিশুমৃত্যু হার ও মাতৃমৃত্যু হার কমাতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিতেও সফল হয়েছে। এছাড়া প্রতিষেধক টিকার সফলতা, পোলিও মুক্তকরণ, ধনুষ্টংকারমুক্তকরণ সহ কমিউনিটি ক্লিনিকের সফলতার মাধ্যমে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পুষ্টির উন্নয়ন সূচকে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত করেছে।
উত্তম কুমার বড়ুয়া আরও বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা এর অন্যতম প্রস্তাবক এবং স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে একজন। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্থ বাজেট অত্যন্ত কম যা জিডিপির ০.৯% কিন্তু ডব্লিওএইচও এর মতে প্রয়োজন ৩% আর স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ০.৪% অথচ প্রয়োজন ২.৫%। আর্থিক স্বল্পতা নিয়েই আজ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত বিশে^র কাছে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম ল্যানসেট ম্যাগাজিনে বারবার উঠে এসেছে এ সাফল্যের কথা। বিশে^ এত কম বাজেটে এতগুলো উন্নয়ন সূচক আর একটা দেশও নেই। এ সম্পর্কে নোবেল জয়ী ভারতীয় বাঙ্গালী অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনুসরন করতে পারে। ভারতের সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী সোনিয়া গান্ধিসহ বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের এ উন্নয়নকে স্বীকার করেছেন। পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশসহ ই্উনাইটেড নেশন, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ও বিশ্বের অনেক দেশই আজ বাংলাদেশের এ অর্জনকে স্বীকার করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক পৃথিবীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি নতুন কনসেপ্ট। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। আর এ স্বপ্নের রূপকার তারই কন্যা শেখ হাসিনা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক কাজ করছে। দেশে এখন ১৩ হাজারের অধিক ক্লিনিক রয়েছে। এতে দেশের মানুষ আজ উপকৃত হচ্ছে। আরও ৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারের পরিকল্পনা আছে। এর ফলে আমাদের প্রান্তিক জনসেবার স্বাস্থ্য সেবার মান আরও উন্নত হবে। সরকার প্রান্তিক মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন নতুন অনেক রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছে। এছাড়া জনস্বার্থে পুরনো রাস্তাগুলোকে পাকা করে দিয়েছে। এখন গ্রাম থেকে শহরে আসা যাওয়া করতে সময় লাগে মাত্র আধ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা। গ্রামের মানুষ অতি প্রয়োজন ছাড়া এখন আর শহরমুখী হয় না । কারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক সেবার সুযোগ সুবিধা। সরকার এ ক্লিনিকে প্রায় ১৮ প্রকার ঔষধ বিনামূল্যে বিতরণ করে থাকে। এছাড়া ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের বেশির ভাগ ক্লিনিকে মেটারনিটি সুবিধাসহ এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে থাকে। আর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন প্রকারের রোগ প্রতিরোধ করতে সচেতনতামূলক প্রচার ছাড়াও অনেকগুলো ডিজিট নিয়ে কাজ করছে এ ক্লিনিক। ফলে দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তাই আমি মনে করি কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্যেই নোবেল পেতে পারেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া করোনা মোকাবেলায়ও বাংলাদেশের সাফল্য অভূতপূর্ব। সংক্রমনের হার কম, সুস্থতার হার বেশি আর মৃত্যুরহার মাত্র ৪%। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সমন্বিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্যখাতে দেয়া ইতিবাচক দিক তুলে ধরে উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিডিপির ৩.২% জণগণের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। একদিকে দীর্ঘায়িত বন্যা,আম্পান এবং অন্যদিকে কোভিড-১৯। সাফল্যের সাথে সামাল দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সংক্রমক ব্যাধির পাশাপাশি এনসিডি, নন- কমিউনিক্যাবল রোগীদের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। মূলত বিশ^ মহামারিতে স্বাস্থ্য বিভাগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একদিকে কোভিড ১৯ এসডিজি টার্গেট, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ পরিবার পরিকল্পনা, সংক্রমক ব্যাধি, পুষ্টি, স্যানিটেশন কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সবই সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে।