মেয়াদ বাড়িয়েও এক ছটাক ধান কিনতে পারেনি নওগাঁ খাদ্য অধিদপ্তর। সরকারীভাবে ধান চাল ক্রয়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১শে আগস্ট। মেয়াদ শেষে হলে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। ১৫ দিনে চাল কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯১৮ মেট্রিক টন। তবে মেয়াদ বাড়িয়ে এই ১৫ দিনে এক ছটাক ধান কিনতে পারেনি নওগাঁ খাদ্য অধিদপ্তর। নওগাঁ খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলার ১১টি উপজেলায় বোরো মৌসুমের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩২ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন। এর মধ্য কেনা হয়েছে ৪ হাজার ৩০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে ২৭ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সুত্রে আরো জানাযায়, গত ২০এপ্রিল নওগাঁয় সরকারীভাবে ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রম শুরু করা হয়। চলতি বোরো মৌসুমে ২৮ হাজার নির্বাচিত কৃষকের কাছ থেকে ৩২ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন ধান ও চুক্তিবদ্ধ ৯৬১ জন মিলারের কাছ থেকে ৪৯ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন চাল সরকারীভাবে ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সরকারীভাবে ধান কেনা হচ্ছে প্রতিকেজি ২৬ টাকা ও চাল ৩৬ টাকা দরে। ১১টি উপজেলার মধ্য সদরে অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি ১১টি উপজেলায় লটারির মধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৬ পারসেন্ট চাল এবং ১২-১৩ পারসেন্ট ধান কেনা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ৯৫ শতাংশ জমিতেই জিরা ও কাটারিভোগ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। বাকি জমিতে সুগন্ধি ও বিআর-২৮ ধানের চাষ করা হয়েছে। ৬১ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাদেবপুর উপজেলার মহাদেবপুরহাট, মাতাজিহাট, সরস্বতীপুরহাট ও রানীনগর উপজেলার আবাদপুর হাটে বর্তমানে প্রতি মণ (৪০ সের এক মণ) কাটারীভোগ ১১২০ থেকে ১১৫০ টাকা, জিরা ১১৫০ থেকে ১১৭০ টাকায় ও বিআর-২৮ ধান এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আউশ ধান (পারিজা) বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকা দরে। হাসকিং ও অটোমেটিক রাইস মিলের বেশ কয়েকজন মালিকরা জানিয়েছেন, এবার বাজারে ধানের দাম বেশী, ফলে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে গেলে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্বেও সরকারি গুদামে চাল দিতে পারেননি তারা। অপরদিকে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের আবদার রক্ষা করতে হয়, সেটাও এক ধরনের সমস্যা বলে জানান তারা। চালকল মালিকরা বলছেন, ৩২ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন চাল দিতে হলে তাদের লোকসান হবে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। কারণ প্রতি মণ ধান ১১০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৪১ থেকে ৪২ টাকা। সরকারি খাদ্যগুদামে চাল দিলে প্রতি কেজিতে মিলারদের লোকসান গুনতে হবে ৪ থেকে ৫ টাকা। জেলার একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে গেলে শুকনা ধানকেও বলা হয় ভেজা। টাকার জন্য ব্যাংকে ঘুরতে হয় বেশ কয়েক দিন। সঙ্গে গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ লাগে। এছাড়াও নানা অজুহাত দেখান খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। নওগাঁ সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, সরকার ধান-চালের যে দাম নির্ধারন করে দিয়েছেন স্থানীয় বাজারে সেই ধান তারচেয়েও বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে নির্বাচিত কৃষকেরা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অথচ কৃষক নির্বাচনের সময় প্রচুর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তারা। এখন ধান বিক্রির জন্য ফোন করেও তাঁদের কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জি এম ফারুক হোসেন পাটোওয়ারী জানান, কম পরিমানে ধান-চাল সংগ্রহের একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে বর্তমান বাজারদর ও সরকারী বাজারদরের মধ্য অনেক পার্থক্য। বাইরে ধানের দাম বেশী। খাদ্য গুদামে ধান দিলে ব্যাংকে কৃষকদের ঘোরাঘুরি করতে হয়। হাটে-বাজারে আড়তে ধান বিক্রি করলে ধান ভেজা থাকলেও এ সমস্যায় পড়তে হয়না। কিন্তু আমরা ভেজা ধান কিনিনা। সময় বাড়িয়ে চাল কেনা সম্ভব হলেও ধান কেনা সম্ভব হয়নি।