মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে পৌরসভার আন্ধারমানিক, জয়নগর ও কান্দাপৌলি গ্রামের নদীপাড়ের অসংখ্য বাড়িঘর ও ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙণের মুখে রয়েছে আরো অসংখ্য বাড়িঘর ও স্থাপনা। কালীগঙ্গা নদীতে অবৈধ ড্রেজার অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালী একটি মহল এর সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রশাসন বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত বালু মহালের ইজারা পায় মেসার্স শামিম এন্টারপ্রাইজ ও সরকার কর্পোরেশন। মেসার্স শামিম এন্টারপ্রাইজের মালিক মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ইস্রাফিল হোসেনের ছোট ভাই শামীম । আর সরকার কর্পোরেশনের মালিক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার। এরা দুজনেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের ঘনিষ্ঠ। কালীগঙ্গা নদীতে অবৈধ ড্রেজার সরেজমিনে দেখা যায়, বালু মহালের ইজারা নিয়ে কালীগঙ্গা নদীর জয়নগর এলাকায় অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফেরির উপর স্থাপিত ড্রেজারটি স্থান পরিবর্তন করে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন শত শত বলগেট ভর্তি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদক সরেজমিন পরিদর্শনের দুই ঘন্টা পর ড্রেজারটি বালু মহাল এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। স্থানীরা জানিয়েছেন, দিনের বেলায় স্থান পরিবর্তন করলেও রাতে স্থান পরিবর্তন করা হয় না। সারারাত ধরে চলে বালু উত্তোলন। মাঝে মাঝে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে ধাওয়া করে। তখন ড্রেজারটি সরিয়ে নেওয়া হয়। বেশ কয়েকদিন রাত জেগে পাহাড়াও দিয়েছেন তারা। জয়নগর গ্রামের মামুন মিয়া বলেন, ‘নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সে কারণে নদীপাড়ের অসংখ্য বাড়িঘর, জমিসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে । আমরা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালাম হোসেন বলেন, কালীগঙ্গা থেকে বালু উত্তোলনের কারণে আমার আড়াই বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক টাকার ব্যবসা এখানে আমি কিছু বলতে পারি না। কিছু বলতে গেলে প্রাণে মারার হুমকি আসে। গতকাল (শুক্রবার) এলাকা বাসি সেখানে গিয়েছিলেন তাই আমার উপর থেকে চাপ আসতেছে। ইজারাদার শামীম বলেন, বালুমহালের ইজারা আমার নামে থাকলেও আমি কখনো ওখানে যাইনি। বালুমহালটি দেখাশুনা করেন আফসার সরকার। ওইখানে আমার কোন ড্রেজার বা বলগেট নাই। এদিকে আফসার সরকারের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘সেখানে ইজারাদাররা বলগেট বসিয়ে নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করছেন। কিন্তু, ইজারাভুক্ত এলাকার বাইরে বালু বা মাটি উত্তোলনের অভিযোগটিও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউ যাতে নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা নজর রাখছি।’ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউ নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।