বিলুপ্তির পথে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে একটি কুয়া। একসময় মানুষের পানের জন্য সুপেয় পানির উৎস ছিল কুয়া। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে গ্রামবাংলার মা-বোনের কলসি নিয়ে কুয়া থেকে পানি নিয়ে আসার চিত্র তেমন দেখা না গেলেও দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, খানসামাসহ কিছু এলাকায় আজও দেখা গেছে। কুয়া সাধারণত ইঁদারা, ইন্দিরা, ইন্দ্রা, কূপ ও পাতকুয়া বিভিন্ন নামে পরিচিত। ১০-১৫ ফুট গোল গর্ত করে অন্তত ৫০-৬০ ফুট নিচ পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে এসব কুয়া তৈরি করা হতো। মাটির নিচের পানির স্তরই ছিল এসব কুয়ার পানির প্রধান উৎস। কুয়ার নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চারপাশ ইট বা রিং (সিমেন্ট-বালুর তৈরি গোলাকার কাঠামো) দিয়ে বাঁধাই করা হতো। ৯০ দশক পর্যন্ত অনেক এলাকার মানুষ তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করতো এসব গভীর কুয়া থেকে। এসব কুয়ার পানি হতো স্বচ্ছ ও ঠাণ্ডা। সুপেয় পানি পানের অভাববোধ থেকেই মানুষ খনন করতো গভীর কুয়া। খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর থেকে সংগৃহীত পানি দিয়ে ঘর-গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় কাজ করতো। গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। যা এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর বাড়ি বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে, হারিয়ে গেছে প্রকৃতির সান্নিধ্য। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করছি কত রকমের নামি-দামি কোম্পানির ফিল্টার কিংবা পানি বিশুদ্ধ করছি ফুটিয়ে। অথচ ৯০ দশক পর্যন্ত কুয়ার পানির ব্যবহার ছিল সবর্ত্রই। কালের সাক্ষী বিলুপ্তপ্রায় কুয়ার সন্ধান মেলে চিরিরবন্দরের ইসবপুর ইউপির দক্ষিণ নওখৈর গ্রামে। যার নিচে চারদিকে প্লাস্টার করা। যা আজও ব্যবহার হচ্ছে। এলাকার মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে এই কুয়া নির্মাণ করেন মরহুম ছমিরউদ্দিন শাহ্। এখনো এই কুয়ার পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় তোজাম্মেল হোসেন বলেন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই আমি এই কুয়া দেখে আসছি। এর গভীরতা অনেক। পানি বেশ ঠাণ্ডা ও স্বচ্ছ। এক সময় এলাকার সবাই এ কুয়ার পানি পান করতাম। আগে পানির স্তর ভূগর্ভের নিচে নেমে গেলে এ কুয়ার ওপরই নির্ভর করতে হতো।