![Daily Nabochatona](https://dailynabochatona.com/wp-content/uploads/2023/01/31BwAd3.png)
পোল্ট্রি শিল্প কৃষি শিল্পের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নে কৃষির পরই সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প। এখানে যেসব মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত, তার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী। গার্মেন্টস শিল্পের পর কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখছে এ শিল্প। এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, প্রায় ১ লাখ প্রাণী চিকিৎসক, পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ, নিউট্রিশনিস্ট সরাসরি নিয়োজিত রয়েছেন এ পেশায়। এ খাতের উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে দেশের পোল্ট্রি শিল্প এখন হুমকির মুখে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারণে এ শিল্প বর্তমানে অস্তিত্ব হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে। নানা সংকটের কারণে ছোট ছোট খামার ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও খামারিরা ব্যবসা করতে পারছেনা। তারা এখনও ক্ষতির সম্মুখীন। কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। পোল্ট্রি সেক্টরে পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের পোল্ট্রি শিল্প। পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা আরও বলেন, আমরা খামারিরা মধ্যসত্ত্বভোগী শ্রেণীর হাতে জিম্মি হয়ে আছি। সংরক্ষণাগার না থাকায় উৎপাদিত ডিম কম দামে ফড়িয়াদের নিকট বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতে হয়। খামারিরা তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্যের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় টিকতে না পেরে এরইমধ্যে খামার গুটিয়েছেন বহু উদ্যোক্তা। রংপুর পৌর বাজার, সিও বাজার, নীলফামারীর জলঢাকা, ডোমার, ডিমলা, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ শিল্পে অস্থিরতার কারণে ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা এবং সোনালি ৩৯০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। ব্রয়লারের মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে। প্রতিনিয়ত দাম বাড়ার কারণে দোকানিদের সঙ্গে ক্রেতাদের চলছে তর্কবিতর্ক। বিক্রেতারা বলছেন দাম বাড়ার কারণে মুরগির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় দাম বাড়ায় তাদের বিক্রি কমেছে বলেও জানিয়েছেন তারা। সরেজমিনে জলঢাকা উপজেলার পোল্ট্রি খামারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বছর দুয়েক আগেও যেসকল পোল্ট্রি খামার বড় ছিলো সেগুলো ছোট করে ফেলেছেন খামারিরা। অনেকেই পোল্ট্রি খামারের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। খামারিরা অনেকে এ ব্যবসায় লোকসান গুণে অন্য ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছেন। অনেকে অন্য পেশাতে না যেতে পেরে এখনো লোকসান গুনছেন। তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার মুরগির খামার ছিল। বর্তমানে আছে মাত্র ৬০ হাজার। আগে একটি মুরগির বাচ্চা কেনা যেত সর্বোচ্চ ১০ টাকার মধ্যে। এখন তা কিনতে হচ্ছে প্রায় ৮০ টাকা দিয়ে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর ফার্মের মুরগির চাষ হয় ৩১ কোটি ১৮ লাখ। গত কয়েক বছরে উৎপাদন ক্রমেই বেড়েছে। এরপরও অস্থির হয় পোল্ট্রি বাজার। জলঢাকা উপজেলা গোলমুন্ডা বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী খলিল ইসলাম বললেন, ‘আমি ২ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করেছি। তখন ভালোই বেচাবিক্রি হইতো। তবে কিছুদিন যাবত প্রায় ক্রেতাশূন্য দিন কাটছে। এখন সারাদিনে ১০-১২ টা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় না। অথচ কয়েকমাস আগেও প্রতিদিন ২০ টার ওপরে বিক্রি হইতো।’ পোল্ট্রি ফিড এবং ছোট বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়াই এর অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি জানালেন। অপরদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় করপোরেট কোম্পানি আরও বড় হচ্ছে, আর প্রান্তিক খামারি দিন দিন ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লস করে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য পোল্ট্রি স্ট্রোক হোল্ডারদেরকে নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি করেছেন। পোল্ট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির কৌশলপত্র তৈরি করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান এ খাত সংশ্লিষ্টরা।