ePaper

ভূয়া সঞ্চয়পত্রে শতাধিক গ্রাহক দশ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে থাকা আনোয়ার গ্রেফতার

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

মেয়াদকালীন অর্থ সঞ্চয় করতে গিয়ে ভুয়া সঞ্চয়পত্র, ভুয়া চেক ও জাল স্বাক্ষরের ফাঁদে পড়ে প্রতারনার শিকার হয়েছেন রামগঞ্জের শতাধিক গ্রাহক। জানা গেছে, গত ৪ বছরে গ্রাহকদের সঞ্চয় দশ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে আত্মগোপনে থাকা রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিসের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন (৪৫) গ্রেফতার হয়েছে। এদিকে গ্রেফতার করার খবর ছড়িয়ে পড়লে অর্ধশত নারী পুরুষ রামগঞ্জ থানার সামনে জড়ো হয়। ক্ষতিগ্রস্থ নারী পুরুষের দাবী টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পোষ্ট অফিসের লোকজন জড়িত রয়েছেন বলে জানান। গ্রাহকরা তাদের সঞ্চয়পত্রের টাকা দ্রুত ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান। সৃষ্ট ঘটনায় আনোয়ার হোসেনকে বিবাদী করে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতে প্রতারণা, চেক ডিজঅনারসহ ৩টি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাগুলো তদন্ত করার জন্য পিবিআই ও ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দেয়। আদালতে মামলার হওয়ার পর থেকে আনোয়ার হোসেন গা ঢাকা দেয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রামগঞ্জ থানার পুলিশের উপ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ও সাব্বির হোসেনসহ পুলিশ সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শনির আখড়া এলাকা থেকে আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে রামগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে। গ্রেফতারকৃত আনোয়ার হোসেন রামগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের নরিমপুর গ্রামের বাঁশয়ালা বাড়ির মৃত আবু সাইদের ছেলে। আনোয়ার হোসেন তৎকালীন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ ক্রমে সুপারিশ ক্রমে রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিসে উদ্যোক্তা হিসেবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে। এর কয়েক দিন পর আনোয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এশিয়ার অনুমতি ক্রমে ডাকঘর অফিসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলে শতাদিক গ্রাহক সংগ্রহ করে। এ সুযোগ আনোয়ার গ্রাহকদের ডাক ঘর অফিস থেকে মেয়াদকালীন সঞ্চয় পত্র সংগ্রহ করে ডিপোজিট খোলার জন্য উৎসাহ দেয়। এতে প্রায় সব গ্রাহক তার লোভনীয় প্রস্তাবে প্ললুব্ধ হয়ে আনোয়ারের কাছে লাখ লাখ টাকা গচ্ছিত রেখে সঞ্চয়পত্র চাইলে আনোয়ার লক্ষ্মীপুর ডাকঘর অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র এবং চেকের ফটোকপি এনে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন নারী পুরুষ জানান, আনোয়ার হোসেন উপজেলা ডাকঘর অফিসে উদ্যোক্তা হিসেবে কম্পিউটার প্রশিক্ষনের পাশাপাশি ব্যাংক এশিয়ার (কেন্দ্রীয় কার্যালয়) অনুমতিক্রমে ডাকঘর অফিসে এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলে একাউন্ট খোলার মাধ্যমে সহস্ত্রাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করেন। ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা জানান, উপজেলা ডাকঘর অফিস থেকে যারা সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করবে মাস শেষে লভ্যাংশের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) থেকে সরাসরি গ্রাহকের একাউন্টে এসে জমা হবে। এমনটাই নিয়ম। কিন্তু যখন দেখলাম বিভিন্ন মাধ্যম থেকে দু’এক মাস গ্রাহকের মোবাইলে ম্যাসেজ যাচ্ছে তখনি নজরে আসে বিষয়টি। পরে খতিয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের একাউন্টে কোন টাকাই জমা হয়নি। সাথে সাথে রামগঞ্জ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালে কৌশলে আনোয়ার হোসেনের পাসপোর্ট জব্দ করা হলে আনোয়ার পালিয়ে যায়। পরে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোর ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। এব্যাপারে রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল বাশার জানান, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশক্রমে ঢাকার শনির আখড়া থেকে প্রতারনা ও অর্থ আত্মসাত মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করি। তার বিরুদ্ধে একাধীক মামলা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *