কাজী মামুন, পটুয়াখালী
জেলার দশমিনায় সুতাবাড়িয়া নদীর একটি সেতু ৮ বছর আগে সেতুটি দুর্ঘটনায় ভেঙে গিয়েছিল। এতদিনেও তা পুননির্মাণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই উপজেলার বাসিন্দারা। উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের সুতাবাড়িয়া নদীর ওপর আরসিসি স্লাবের আয়রন সেতুটিতে ২০১৬ সালে বালুবোঝাই কার্গো ধাক্কা দেয়। এতে সেতুর মাঝখানের অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে প্রাণ হারিয়েছিল পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু। ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় গলাচিপা উপজেলার সঙ্গে দশমিনা উপজেলার সহজ পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়েন বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের ১৫টির বেশি গ্রামের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, নতুন সেতু নির্মাণ কিংবা ভাঙা সেতু সংস্কারের দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। তবে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর বলেন, “জাইকা প্রকল্পের আওতায় সেতু এলাকার মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল, কিন্তু মাটি ব্রিজ নির্মাণের উপযোগী না হওয়ার কারণে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। এখন ওই ব্রিজের কাছাকাছি স্থানে নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে লোহার বীমের ওপর আরসিসি কংক্রিট ঢালাই স্লাব বসিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দুর্ঘটনায় ১৫০ফুট দৈর্ঘ্যরে এই সেতুর মাঝখানে প্রায় ২৫ ফুট ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। সেতু সংলগ্ন জমির মৃধা বাজার এলাকার খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গেছে। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শিক্ষার্থীরা ছোট খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছে। এতে অভিভাবকরা যেমন আতঙ্কে থাকেন তেমনি আমরাও চিন্তিত থাকি। কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে দ্রুতই এই ব্রিজটি সংস্কার অথবা নির্মাণ করা হয়। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সজনী আক্তার মোসা. আয়শা আক্তার ও নবম শ্রেণির সানজিদা আক্তার জানায়, প্রতিদিন খেয়া নৌকায় নদী পার হতে তাদের অনেক কষ্ট হয়, ভয় হয়। অনেক সময় নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে আহত অনেকে। বর্ষা মৌসুমে তাদের বই-খাতা ও পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. সুমন মৃধা বলেন, “জমির মৃধা বাজারের সেতুর উপর দিয়েই গলাচিপা ও দশমিনা এই দুই উপজেলার মানুষের সহজতর যাতায়াতের পথ ছিল। এ পথে দশমিনা উপজেলা পরিষদে যেতে আগে খরচ হত ৪০ টাকা। আর এখন ঘুরে যেতে খরচ হয় ১২০ টাকা।” খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক একই এলাকার বাসিন্দা মো. হিরন আহমেদ জানান, ইউনিয়নের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সুতাবাড়িয়া নদীটি। নদীর পশ্চিম তীরে ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে জমির মৃধা বাজার, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফেজিয়া মহিলা মাদ্রাসা, জামে মসজিদ রয়েছে। নদীর পূর্ব পাড়ে ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে জাফরাবাদ দাখিল মাদ্রাসা। যেখান থেকে দশমিনা উপজেলা সদরে সহজতর পথ। দুই পাড়ে গ্রাম রয়েছে বহু। মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র। এছাড়াও এখানে খারিজা বেতাগী নামে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সেতুটি ভেঙে পড়ায় সেখানে সেবা নিতে আসা নারী-শিশু রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে, বলেও জানান এ শিক্ষক। এ বিষয়ে বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান ঝন্টু বলেন, “সেতুটি না থাকায় দুই পারের শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। গার্ডার ব্রিজ না হলেও অন্তত চলাচলের জন্য একটি মজবুত আয়রন ব্রিজ দ্রুত নির্মাণ করা প্রয়োজন।” দশমিনা উপজেলা প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, “জাইকা প্রকল্পের আওতায় নতুন সেতু নির্মাণে জন্য দুই পারের মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু টেস্টে সেতু নির্মাণের উপযোগী মাটি না থাকায় ওই স্থানে ব্রিজ নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে আমরা ওই ব্রিজের পাশেই ব্রিজ নির্মাণের জন্য নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।”