নরসিংদীর পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যাকান্ডের ৯বছর আজ। ২০১১ সালের এই দিনে দলীয় কার্যালয়ে তাকে গুলিকওে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর ২০১৯ সালের শুরুর দিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার অভিযোগ পত্রের উপর বাদির দায়ের করা নারাজি আবেদন আদালত গ্রহন করায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালত পুনঃতদন্তে শুধু মাত্র বাদীর জবানবন্দী গ্রহন কওে তদন্ত শেষ করে দেন।এ ঘটনায় রিভিশন চেয়ে বাদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন।বর্তমানে তা শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে। এ দিকে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের আন্তঃকোন্দলের সুযোগে লোকমান হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামীরা ও চার্জশীট ভুক্ত আসামীরা আশ্রয় নিয়েছে নরসিংদী সদরের সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম হীরুর কাছে। এ সুযোগে সাংসদও দলে তাঁর অবস্থান দৃঢ় করতে আসামীদেও দিয়ে বিভিন্ন মিটিং মিছিল করাচ্ছেন। এতে লোকমান হত্যা মামলার বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের একাংশ ও নিহত লোকমান হোসেনের পরিবার। এদিকে লোকমান হোসেনের ৯তম মৃত্যু বাষির্কী উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষনা করেছে জনবন্ধু শহীদ লোকমান পরিষদ। তাঁরা প্রয়াত লোকমান হোসেনের সমাধিতে পুষ্প স্তবক অর্পন, দোয়া মাহফিল, গণভোজ, স্মরণসভা,বিনামূল্যে চিকিৎসা সহ বিভিন ্নকর্ম সূচি গ্রহন করেছে। মামলার বাদি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বর্তমান মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মন্ডল প্রায় দীর্ঘ ৮ মাস তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহ উদ্দিন সহ এজাহার ভুক্ত ১১ আসামীকে বাদ দিয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দেয়। এতে মামলার এজাহার ভুক্ত তিন নম্বও আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধক্ষ মোবারক হোসেন, এজাহার ভুক্ত দুই নম্বও আসামি নরসিংদী পৌর সভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকার সহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এদিকে অভিযোগ পত্র দাখিলের আগেই মোবারক হোসেন মোবা ছাড়া সবাই আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে যান। দীর্ঘ ৭ বছর পর গত ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ও বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এদিকে পুলিশের দেওয়া অভিযোগ পত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদি মো. কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ কওে অভিযোগ পত্র বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদি। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদি। তিনি ওই অভিযোগ পত্র বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচার কার্য স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত বাদির আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচার কার্য স্থগিত করে দেন। এ ঘটনায় জামিনে বের হয়ে আসামিরা সুপ্রীম কোর্টের আপিল ডিভিশনে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। এরই ধারা বাহিকতায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধওে শুনানীর অপেক্ষায় থাকার পর আদালত ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি আসামিদের করার রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে বাদির নারাজি আবেদন গ্রহন করতে এবং বাদি ও স্বাক্ষী গণের জবান বন্দি গ্রহন করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জুন দুপুওে নরসিংদী জজ আদালতের মূখ্য বিচারিক হাকিম মো. রকিবুল ইসলাম শুধু মাত্র বাদী কামরুজ্জামানের জবানবন্দি গ্রহন করে তদন্ত শেষ করে দেন।এ ঘটনায় বাদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন।বর্তমানে তা শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে। বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আসাদ আলী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে অভিযোগ পত্রের উপর বাদির দায়ের করা নারাজি আবেদন আদালত গ্রহন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত শুধুমাত্র বাদিও জবান বন্দি গ্রহন কওে মামলার পুনঃতদন্ত শেষ করে দেন। তাই আমরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেছি। বর্তমানে তা শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে। মামলার বাদি পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পুলিশের দেওয়া অভিযোগ পত্রটি সঠিক ছিল না। সেখানে অভিযুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১১ আসামিকেই বাদ দেওয়া হয়েছিল। যত দিন পর্যন্ত প্রকৃত আসামীদেরকে বিচারের আওতায় না আনা হবে তত দিন আমরা আইনি লড়াই করে যাব। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূইয়া বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের মত বিরোধের সুযোগ নিয়ে লোকমান হত্যার আসামীরা সদর সাংসদ নজরুল ইসলাম হিরুর কাঁধে ভর করে আছে। এতে বিচার কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তাই আমরা সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কায় আছি।