বগুড়া-৭ আসনে বহুল আলোচিত সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী পিস্তল হাতে ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। ছবিটি ভাইরাল হওয়ায় জেলার সর্বত্র নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এমপি বাবলু দাবি করেছেন, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তার সঙ্গে শত্রুতা করছেন। তাই নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছেন। ওই ছবিটি ঢাকার একটি দোকানে কেনার সময় তার সঙ্গীরা তুলেছেন। আর ছবিটি তার নিজের নয়, অন্যের আইডিতে পোস্ট দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বিএনপি প্রার্থী মোরশেদ মিল্টন নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন। ক্ষমতাসীনরা আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আজম খানের স্ত্রী ফেরদৌস আরা খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে সমর্থন দেন।
এছাড়া রেজাউল করিম বাবলু ট্রাক মার্কা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা বাবলুকে সমর্থন দেয়ায় তিনি জাপা প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে এমপি হন। তিনি পেয়েছিলেন, ১ লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট। নির্বাচিত হবার পর তার বিরুদ্ধে হলফনামায় মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে লেখালেখি হলেও তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।
নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় পাঁচ হাজার টাকা দেখান। একটি পুরাতন মোটরসাইকেলে চলাফেরা করতেন। দুই মাসের মাথায় ৩৪ লাখ টাকায় গাড়ি কেনেন। তখন এমপি বাবলু দাবি করেছিলেন, গাড়িটি তার বন্ধুরা উপহার দিয়েছেন। তবে এলাকায় প্রচারণা ছিল, স্থানীয় অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটভাটার মালিকরা তাদের ভাটা রক্ষায় এমপিকে গাড়িটি কিনে দেন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে এমপি রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগীর ফেসবুক আইডিতে অস্ত্র হাতে তার একটি ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ছবিটি দেখার পর জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ফেসবুকে অনেকে নানা মন্তব্য করেন। এমপি বাবলু টের পেয়ে ফেসবুক থেকে ছবিটি সরিয়ে নেন। ফলে শুক্রবার থেকে ছবিটি আর দেখা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের শর্তে স্পষ্ট উল্লেখ আছে বিনা প্রয়োজনে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। এমপি সাহেব অনেক আগেই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। এ ব্যাপারে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়েছে।
বগুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল মতিন জানান, কোনো কারণ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। আগ্নেয়াস্ত্র ধরে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া লাইসেন্সের বরখেলাপ।
ফেসবুকে পিস্তল হাতে ছবি দেয়া প্রসঙ্গে বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী জানান, এমপি হওয়ার পর তার শত্রু বেড়ে গেছে। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তার সঙ্গে শত্রুতা করছেন। করোনাকালে সাংবাদিকদের ফলমুল ও লাখ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এরপরও সিনিয়র সাংবাদিকরা তার বিপক্ষে।
তিনি বলেন, সরকার থেকে এখনও বডিগার্ড দেয়া হয়নি। তাই তিনি নিরাপত্তার জন্য ঢাকার একটি দোকান থেকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি পিস্তল কিনেছেন। কেনার সময় তার সঙ্গে ১৫/২০ জন ছিল। তাদের কেউ পিস্তল হাতে ছবিটি তুলে ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছেন।
তার ফেসবুক আইডিতে ছবিটি দেখা যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ছবি তার আইডিতে ছিল না।