ঘোড়াউত্রা নদীর তীব্র ভাঙনের বুকে গড়ে উঠা নিকলী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী হাওড়াঞ্চল হলো ছাতিরচর ইউনিয়ন। জমিদারী প্রথা তালুকদারীতে রূপান্তরিত হলে প্রায় ১৮৫০ খ্রিষ্ঠাব্দে কিছু মানুষের বসতি গড়ে উঠে চরের এই হাওড়ে। তালুকদারগন খাজনা আদায়ের জন্য স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ করতেন। আর তাদেরকে উপহার হিসাবে দিতেন একটি করে ছাতা। হাওড়ে কোন গাছপালা না থাকায় ছাতা খুব জনপ্রিয় উপহারে পরিনত হয় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায়। চরের এই গ্রামটির পূর্ব কোন নাম না থাকায় আঞ্চলিক ভাষায় গ্রামটির নাম করন করা হয় ছাতিরচর।কাল পরিক্রমায় ছাতিরচর ইউনিয়ন শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, খেলাধুলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার নিজস্ব স্বকীয়তায় আজ সমুজ্জ্বল। কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত নিকলীর মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে নদী তীরবর্তী ছাতিরচর গ্রাম। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার হাওরের স্রোতে ঘোড়াউত্রা নদীর ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে নদী পাড়ের ছাতিরচর গ্রামের কয়েকশত পরিবার। করোনা দুর্যোগের সাথে বর্ষাকাল আসার আগেই যোগ হয়েছে নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গন যেন করোনার চেয়েও ভয়াবহ এ গ্রামের মানুষের কাছে। হাওর অধ্যুষিত গ্রাম ছাতিরচর, হাওরের স্রোতে নদী ঘোড়াউত্রার পাড়ে অবস্থিত বিশ হাজারের উপরে জনসংখ্যার এই গ্রামটি। এই একটি গ্রাম নিয়েই একটি ইউনিয়ন। গ্রামের নামেই ইউনিয়নের নাম ছাতিরচর। পৌনে ২ বর্গকিলোমিটারের এ গ্রামটি এখন দাঁড়িয়েছে ১ বর্গকিলোমিটারে। প্রায় ৪০ বছর ধরে নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহতা ছাতিরচর গ্রামজুড়ে। অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ী নদীতে বিলিন হয়েছে গেলো কয়েক মাসেই। নিশ্চিন্ন হয়ে গেছে এ গ্রামের অনেকের বাপ দাদার কয়েকশত ভিটেবাড়ি। বর্তমানে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ গ্রামের অসহায়দের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাই কাঁচা ঘরবাড়ী ও ভিটে-মাটি। নদী ভাঙ্গনে বাড়ী-ঘর হারিয়ে বিভিন্ন শহরে ভাসমান হয়ে বসবাস করছে ছাতিরচরের বহু পরিবার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘোড়াউত্রা নদীর প্রবল স্রোতে এখনও ভাঙ্গছে মানুষের ভিটে-মাটি। গ্রামবাসী জানায়, ৪০ বছর ধরে গ্রামটি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এ গ্রামের ১ ২ ৩ নং ওয়ার্ড সম্পৃর্ণ ও ৪ ৫ ৬ নং ওয়ার্ডের আংশিক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর দাবি স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধ না করলে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এই ছাতিরচর গ্রামটি। ছাতিরচরের বাসিন্দা রেজাউল রুবেল বলেন, নদী ভাঙনে নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে প্রায় ২ সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি, ১টি প্রাইমারি স্কুল, ২টি মসজিদ, কয়েকটি মক্তব, ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম অস্থায়ী কার্যালয়সহ শত শত একর ফসলি জমি। এখানকার ভিটেহারা মানুষ ঢাকার কাওরানবাজার, কামরাঙ্গিরচর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বস্তিতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হানিফ ইসলাম জানান, নয়নবালি জলমহাল দিয়ে সোজা নদী ডাইভারসন করে স্রোতের তীব্রতা কমিয়ে আনলে নদী ভাঙন থেকে ছাতিরচর ইউনিয়নকে রক্ষা করা সম্ভব। বর্তমান ছাতিরচর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, ১ ২ ৩ নং ওয়ার্ড সম্পৃর্ণ ও ৪ ৫ ৬ নং ওয়ার্ডের আংশিক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধ না করলে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এই ছাতিরচর গ্রামটি। ছাতিরচর গ্রামটিকে রক্ষার দাবী জানিয়েছেন তিনি।