মোয়াজ্জেম হোসেন, নওগাঁ
মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁর আত্রাই উপজেলা। এ উপজেলায় প্রায় শতাধিক জলাশয় রয়েছে। নদী ভিত্তিক এলাকা হওয়ায় সবসময় এখানে ধরা পরে দেশী প্রজাতির মাছ। আর এই মাছ দিয়েই উৎপাদন হয় শুঁটকি। এখানে উৎপাদিত দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ পুঁটি, টাকি, শৈল, চান্দা ও চোপড়ার শুটকির কদর রয়েছে দেশজুড়ে। বন্যা কম হওয়ায় নদী ও জলাশয় গুলোতে দেশীয় মাছ কমেছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী নদীতে মাছ না পাওয়ায় উর্ধ্বমুখী মাছের দাম। প্রতি কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে দেশীয় মাছ পুটি, খলিশা ও টাকি। এতে দেশীয় মাছ সংকটে শুটকি উৎপাদন কমেছে। এর সাথে জড়িতরাও কষ্টের মধ্যে পড়েছে। আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া শুটকি পল্লীতে শুটকি বিক্রি করে সারা বছর চলে ভোরণপোষণে। তবে এ বছর মাছ সংকটে শুটকি উৎপাদন নিয়েও দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়িরা। অনেক চাতাল এখনো ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এসব শুটকি দেশের উত্তরের জেলা সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর ও ঢাকায় সরবরাহ হয়ে থাকে। শুধু দেশেই নয়, ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা রয়েছে শুটকির কদর। এই মাছগুলো প্রথমে সৈয়দপুর যায়। এরপর সেখান থেকে ট্রেন যোগে ভারতে রপ্তানি করা হয়। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানান- বন্যা কম হওয়ায় দেশীর মাছের প্রজনন কমেছে। উপজেলার আহসানগঞ্জ মৎস্য আড়তে মাছ বিক্রি করেন মৎস্যজীবিরা। সেখান থেকে মাছ কিনে পানিতে পরিস্কারের পর লবন দিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুটকি। গত বছরের তুলনায় এ বছর কাঁচা মাছ কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। খলিশা ৭৫-৮০ টাকা কেজি, পুটি ১০০-১৬৫ টাকা এবং টাকি মাছ ২০০-২২০ টাকা কেজি। তবে শৈল ও বোয়ালসহ অন্যান্য দেশী মাছ না পাওয়ায় শুটকি হচ্ছে না। এসব শুটকি সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী ও ঢাকায় সরবরাহ হয়ে থাকে। শুধু দেশেই নয়, ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা রয়েছে শুটকির কদর। ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুটকি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম বলেন, গত বছর এক মৌসুমে ২৫ লাখ টাকার শুটকি বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানে এ বছর তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ টাকার। আগামী জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুটকি তৈরি হবে। এ বছর খলিশা, পুঁটি, চোপড়া ও টাকি ছাড়া অন্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে মাছ কম আসায় বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এতে খরচটাও বেশি পড়ছে। কাঁচা মাছ ৩ মন পুটি শুকিয়ে ১ মন হয়। যা বিক্রি হবে ১০-১২ হাজার টাকা। খলিশা ৪ মন থেকে হবে ১ মন। যা শুকনো বিক্রি হবে ১০ হাজার টাকা মন। শুটকি ব্যবসায়ী খালেক হোসেন বলেন, নদীতে পানি থাকলেও বিল বা অন্যান্য যেসব জলাশয় রয়েছে সেখানে পানি নাই। এতে করে দেশীয় মাছ কম হচ্ছে। আবার চায়না জাল (রিং জাল) দিয়ে মাছ শিকারের কারণে প্রজনন কমেছে। এতে করে প্রতি বছরই কমছে দেশীয় মাছ। কাঁচা মাছ কম থাকায় শুটকির চাতাল ফাঁকা পড়ে রয়েছে। মাছের প্রজনন বিষয়ে মৎস্য অফিসের সঠিক তদাকরির প্রয়োজন। এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলার সিনিয়র উপজেলা কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় ২৬ জন শুটকি ব্যবসায়ি আছে। এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরো ৩০০ জন জড়িত। এ বছর মাছের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বন্যা হয় কম হয়েছে। যার কারণে সঠিক সময়ে প্রজনন হয়নি। তারপরও প্রায় ১৪২ টন শুটকি উৎপাদনের আশা। যার বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা।