ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিতর্কিত ‘ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি’ নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছে সৌদি আরব। বুধবার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, দীর্ঘদিনের আরব ‘শান্তি উদ্যোগের’ (পিস ইনিশিয়েটিভ) ভিত্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি রক্ষার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে সৌদি আরব।
গত ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরায়েল দুই দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তির ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির আওতায় ইসরায়েল নতুন করে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জায়গা দখল করবে না। যদিও পূর্বের দখলকৃত জায়গার ব্যাপারে তাতে কিছুই বলা হয়নি।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন লড়াই, ফিলিস্তিন ইস্যুসহ মধ্যপ্রাচ্যের পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি খোল-নলচে পাল্টে যেতে পারে।
২০১২ সালে সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে আরব পিস ইনিশিয়েটিভের প্রস্তাব দেয়। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখিত এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখলিকৃত ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব পুরোপুরি প্রত্যাহারের বিনিময়ে দেশটির সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রস্তাব দেয় রিয়াদ।
২০ আগস্ট বুধবার জার্মানির বার্লিনে এক অনুষ্ঠানে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করার জন্য ইসরায়েলের যে কোনও ধরনের একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে হেয় করার শামিল বলে মনে করে সৌদি আরব।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ইরানকে নিজেদের জন্য বড় ধরনের হুমকি মনে করে সৌদি আরব এবং ইসরায়েল। তেহরান এবং রিয়াদের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদ এবং তেলআবিবের কিছু কার্যক্রমেও সেই ইঙ্গিত মিলেছে।
ইসলাম ধর্মের তীর্থস্থান এবং মুসলিম বিশ্বের পবিত্রতম উপাসনালয়ের আঁতুরঘর সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি। একই সঙ্গে এই দেশটির বিমানসংস্থাগুলোর জন্য সৌদি আরবের আকাশ বন্ধ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র এই দেশটিতে ২০১৫ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন ৮৪ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান। ফিলিস্তিনিদের অধিকারের লঙ্ঘন এবং জেরুজালেমের মর্যাদা পাল্টে দেয়ার মতো মধ্যপ্রাচ্যের কোনও শান্তি পরিকল্পনা সৌদি সমর্থন করবে না বলে দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন বাদশাহ।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাদশাহ সালমানের সঙ্গে সৌদির ডি ফ্যাক্টো নেতা ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের মতের কোনও অমিল নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের সুসম্পর্ক থাকলেও গত এপ্রিলে মার্কিন একটি ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ইসরায়েলিরা শুধুমাত্র তাদের নিজ ভূখণ্ডেই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার রাখেন। খবর রয়টার্স।