কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
ভারী বর্ষণ ও ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। দুই নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে তীরবর্তী এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আজ বুধবার পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটারের চেয়ে এক সেন্টিমিটার কম। একইদিন গড়াই নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার, বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে দেড় সেন্টিমিটারের বেশি নিচে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও স্কুল প্লাবিত হয়েছে। চরের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গবাদিপশুর বাথান ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই পশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা জানান, আবাদি জমি ও রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না তারা। যদিও এখনো তাদের বসতবাড়িতে পানি ওঠেনি, তবু বন্যার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গড়াই নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। গতকাল তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। নতুন করে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ১৪ তারিখের পর থেকে পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করছি। চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চিলমারী ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নিচু এলাকায় বসবাসরত মানিকের চরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় তারা অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। ওইসব এলাকার উঠতি ফসল মরিচ, পাট ও ধান তলিয়ে গেছে। বহু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। গবাদিপশু নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এবিষয়ে চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে, চরের ধান, মরিচ ও পাট ডুবে গেছে। ঘরবাড়ি প্লাবিত না হলেও সবাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় ওইসব বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোখাদ্যেরও চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, নদীর ওপারের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। যার অধিকাংশই পানিবন্দি। ঘরবাড়িতে এখনও পানি ওঠেনি, তবে মাঠের আবাদি ফসল ডুবে গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, চরের দুই ইউনিয়নের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়ে। বাকিগুলো সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও স্কুল প্লাবিত হয়েছে। ১৩টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করছি। তাদের প্রয়োজন হলে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো। পানি আরও বাড়তে পারে। সেজন্য আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছি।
কুষ্টিয়ায় পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ
