সবুজ দাস, ফরিদপুর : ফরিদপুরে বাড়ি থেকে জমির কাগজপত্র নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে ফরিদ খান (৫০) নামে এক কৃষক অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে পরিবারের অভিযোগ। এমনকি তার ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ফোন দিয়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছেন। তবে ওই কৃষককে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যহত রেখেছে পুলিশ। অপহৃত কৃষক ফরিদ খান. ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রামখন্ড গ্রামের বাসিন্দা। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এ ঘটনায় কৃষকের পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, গত ০১ মে দুপুরে নিজবাড়ি থেকে ফরিদপুর জেলা শহরের কোর্টপাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন কৃষক ফরিদ খান। রাতে বাড়িতে না ফেরায় বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরের দিন গত ২ মে কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বোন নুরুন্নাহার বেগম। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রতিবেশীদের সাথে ১৫ বিঘা জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে ফরিদ খানের। এই জমি সংক্রান্ত মামলায় আগামী ১৬ মে আদালতের রায় হবে। সেই লক্ষ্যে আইনজীবীর সাথে দেখা করার জন্য জমির দলিলপত্রসহ সকল কাগজপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে শহরের উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। এরপর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় ফরিদ খান। তার মোবাইলে ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে মোবাইল খোলা পাওয়া যায়, তখন অপরিচিত একজন রিসিভ করে বলে উনাকে পেতে হলে তিন লাখ টাকা লাগবে। এরপর থেকে আবার মোবাইল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দুইদিন পর ফোন খোলা পেয়ে আবারো ফোন দিলে অপহরণকারীরা বলেন, তিন লাখ টাকা দিলে যেখান থেকে এনেছি, সেখানে তাকে দিয়ে আসব। বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। দ্রুত অপহৃত ফরিদ খানকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। সরেজমিনে জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রামখন্ড গ্রামে ফরিদ খানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠয় রয়েছে পরিবারের সদস্যরা। বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীসহ স্বজনরা ভিড় করছেন। ছেলের ছবি হাতে নিয়ে কান্নাকাটি করছেন বৃদ্ধা মা আছিয়া বেগম (৭২)। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী রাহিমা বেগম ও সন্তানেরা। ফরিদ খানের স্ত্রী রাহিমা বেগম বলেন, নিখোঁজের দিন সারাদিন মাঠে কাজ করে দুপুরে কাগজপত্র নিয়ে ফরিদপুরে উকিলের সাথে দেখা করার জন্য বের হয়ে আর বাড়িতে ফিরে নাই। যাওয়ার পথে কানাইপুর বাজার থেকে সকল কাগজের ফটোকপিও করেন তিনি। তিনি জানান, নিখোঁজের পরেরদিন রাতে তার মোবাইল নম্বর খোলা পেয়ে কল দিলে অপরিচিত একজন রিসিভ করে বলে তাকে পেতে হলে তিন লাখ টাকা লাগবে বলে। এরপর মোবাইল বন্ধ করে রাখে। দুইদিন পর আবারো ফোন দিয়ে তারা বলেন, তিন লাখ টাকা দিলে যেখান থেকে এনেছি, সেখানে দিয়ে আসব। তাদের সাথে সর্বশেষ ৪ মে কথা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনাটি থানায় জানালে পুলিশ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেনা। লোকেশন দেখা যাচ্ছে কিন্তু তারা উদ্ধার করতেছে না। আমরা গরিব মানুষ বলে আমার স্বামীকে কি ফিরে পাব না। আমার স্বামী ফিরে না এলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিভাবে বাঁচব। ফরিদ খানের ভাই মিন্টু খান বলেন, ভাইকে বাঁচাতে ধার দেনা করে অপহরণকারীদের দাবীকৃত তিন লাখ টাকা আমরা রেডি করে রেখেছি। কিন্তু কোথায় কিভাবে দিব তা জানাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদউজ্জামান জানান, ফরিদ খান নিখোঁজের পর তার বোন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এরপর থেকে পুলিশ ওই কৃষককে উদ্ধারে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি কোথায় আছেন তা শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। খুব দ্রুতই তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
Related News
ফরিদপুরে দুই ভাইকে কুপিয়ে জখম
- Sahin Alom
- April 6, 2025
- 0
লিয়াকত হোসেন, ফরিদপুর ফরিদপুর সদর উপজেলার মুন্সিবাজার এলাকার রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী দুই ভাই রঞ্জিত বিশ্বাস (৪৫) ও লিটন বিশ্বাস (৩৫) কে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের […]
মধুখালী উপজেলার নরকোনা ছোট দুটি ব্রীজের দু’পাশে রাস্তার বেহাল দশা
- Sahin Alom
- April 28, 2025
- 0
মধুখালী প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের শান্তিপুর ও মেগচামী ইউনিয়নের নরকোনা গ্রামের মানুষের কৃষি উৎপাদিত ফসল নিয়ে বিরালদি বাজারের প্রবেশের প্রধান সড়ক নরকোনা এই […]
ফরিদপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিতরণ
- Sahin Alom
- June 3, 2025
- 0
ব্যুরো চিফ, ফরিদপুর ফরিদপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিতরণ ও বেসামরিক প্রশাসনের চাকুরিরত অবস্থায় কোন সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুবরণ অথবা আহত হয়ে স্থায়ী অক্ষমতা […]