সওকত আলী খান বাদল, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিল দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন লিওনার্দো ডি অলিভেরা জানুজ্জি ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ীবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও চিটাগাং চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা এর সভাপতিত্বে দূতাবাসের এগ্রিকালচারাল অ্যাটাচে সিলভিও লুইজ রদ্রিগেস টেস্টাসেকা, ব্রাজিল-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (বিবিসিসিআই) এর পরিচালক ইমরান চৌধুরী, বিজিএমইএ এর সাবেক পরিচালক এ এম সেলিম উদ্দিন, কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স লি. এর নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার এসোসিয়েশন এর মুহাম্মদ ফরহাদ উদ্দিন ও চেম্বার যুগ্ম সচিব নুরুল আবছার চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এ সময় ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য ‘মেইড ইন বাংলাদেশ এক্সপো, ২০২৫’ সম্পর্কে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বিবিসিসিআই এর মহাসচিব মো. জয়নাল আবেদীন। অন্যান্যদের মধ্যে ট্রাস্টেড শিপিং লাইন্স লি. এর পরিচালক ওয়াহিদ আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. ফখরুল ইসলাম ও মো. মেজবাহ উদ্দিন, এইচএনএস অটোমোবাইলস এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. এ আসলাম, শিপার্স কাউন্সিল এর পরিচালক লোকপ্রিয় বড়ুয়াসহ বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী ও চেম্বার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ব্রাজিল দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন লিওনার্দো ডি অলিভেরা জানুজ্জি চট্টগ্রামের অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন- ব্রাজিলের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে হলে প্রাইভেট সেক্টরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ বাড়াতে হবে। আগামী ১৫-১৮ জুন ব্রাজিলের সাও পাওলোতে অনুষ্ঠেয় এক্সপো দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সংযোগ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন- ব্রাজিলের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশ আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়েসহ ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশী পণ্যের পরিচিতি তুলে ধরতে এই এক্সপো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ ব্রাজিল হচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকার গেটওয়ে। এছাড়াও বাংলাদেশ এবং ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের লক্ষ্যে কাজ করছে দূতাবাস। পাশাপাশি বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং ট্রেড ফ্যাসিলেশন বাড়ানোর লক্ষ্যে দূতাবাস ব্রাজিল সরকারের সাথে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন- ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং দূতাবাস রয়েছে। ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে প্রচুর পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের অধিক পণ্য আমদানি করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে একই সময়ে মাত্র ১৭৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। দুই দেশের এই বিশাল বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে ট্যারিফ সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে পণ্য রপ্তানি করতে গেলে ৩০-৩৫% শুল্ক প্রদান করতে হয়। তাই উভয়দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে শুল্ক কমানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি বলেন-বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার বিশাল বাজারে ব্রাজিলের কৃষি পণ্যের যে চাহিদা রয়েছে তার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং কৃষি প্রধান বাংলাদেশের সাথে কীভাবে কৃষি খাতে উন্নয়ন এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করার আহবান জানান চেম্বার প্রশাসক। একই সাথে চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব বিবেচনা করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ব্রাজিলিয়ান বিনিয়োগকারীদের একক ও যৌথ বিনিয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি আগামী জুনে ল্যাটিন আমেরিকার মাটিতে ব্রাজিলের সাও পাওলাতে অনুষ্ঠিতব্য ১ম বাংলাদেশ এক্সপোতে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। দূতাবাসের এগ্রিকালচারাল অ্যাটাচে সিলভিও লুইজ রদ্রিগেস টেস্টাসেকা বলেন- ব্রাজিল কৃষি সমৃদ্ধ দেশ। এখানে উন্নতমানের কফি উৎপাদন হয়, যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কফি প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয় পাট ও পাটজাত দ্রব্য। আবার বিশ্বব্যাপী কৃষি পণ্য বিশেষ করে মুরগি এবং মাংস উৎপাদনে ব্রাজিল বিখ্যাত। বাংলাদেশে রয়েছে মাংসের প্রচুর চাহিদা। তাই বাংলাদেশে মাংস রপ্তানির ব্যাপারে কাজ করছে ব্রাজিল সরকার। এছাড়া কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে বাংলাদেশী পাটজাত পণ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এক্সপোতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানান তিনি। অন্যান্য বক্তারা বলেন-বর্তমানে ফার্মাসিউটিক্যালস, আরএমজিসহ অনেক বাংলাদেশী পণ্যের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উচ্চহারে শুল্কের কারণে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হচ্ছে না। কৃষি সমৃদ্ধ ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং শুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্রাজিলীয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশ থেকে কৃষি বিষয়ক জনশক্তি নেয়ার আহবান জানান তারা।