সাতদফা দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় ইটপ্রস্তুতকারক মালিক ও শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি পেশ করেছেন। আজ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টায় চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি শহরের দুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণের এক পর্যায়ে শহীদ হাসান চত্বর এবং কোর্ট মোড় এলাকায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় প্রধান সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের চত্বরে পৌছে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরে ইটপ্রস্তুতকারক মালিক ও শ্রমিকরা সাতদফা দাবিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্বারকলিপি পেশ করে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি খাজা নাসির উদ্দীন শান্তি, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আকুল, ইট প্রস্তুতকারক শ্রমিক রাইহান উদ্দিন, জাকির হোসেন, মোছা. অনি আক্তার প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা বাংলাদেশের ইটভাটা মালিকগণ বিগত ৩৫/৪০ বৎসর যাবৎ অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেনিয়ে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা করিয়া আসছি। দেশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ী সহ সকল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত ইট সরবরাহ করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সমতা রেখে আমরা ইটভাটার মালিকগণ বায়ুদূষণ রোধে সরকার নির্দেশিত আধুনিক পরিচিত প্রযুক্তির ‘জিগজাগ ভাটা স্থাপন করি যাহা জ্বালানী সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ও উপমহাদেশে টেকসই এবং সহজ প্রযুক্তি হিসাবেবর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে এখন দেশের ইটভাটা সমূহ মাত্র ৫-১০% বায়ু দূষণ করছে, জৈব বস্তু পোড়ানোতে ৪০% এবংযানবাহনের কালো ধোয়া ৫০%। পূর্বে ইটভাটার দূষণমাত্রা ছিল ৫৮%। বিদ্যমান জিগজাগ ভাটার আরও অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশদূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই শিল্পে প্রায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত আছে এবং ৫০ লক্ষ পরিবার তথা ২ কোটি মানুষের রুটি রোজীর ব্যবস্থা আমরাই করেছি। ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে এই লোকগুলো বেকার হয়ে পড়বে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ইভাটার বিপরীতে ১ কোটিটাকার উপরে ব্যাংক লোন যা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এই ভাটা সমূহ বন্ধ হয়ে গেলে সমুদয় ব্যাংক দেনা অনাদায়ী থেকে যাবে। ইটভাটার মালিকগণ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার অধিক রাজস্ব দিয়ে থাকেন। বর্তমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জিগজাগ ইটভাটার সমস্যাসমাধান হচ্ছে না। আমরা আশা করছি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারমাধ্যমেই ইটভাটা পরিচালনার একটি যুক্তিক সমাধান হবে। সবার আগে ড্রাম চিমনী, ফিক্সড চিমনী ও লাকড়ী নিয়ে পোড়ানো ইটভাটাসম্পূর্ণ বন্ধ করা সিদ্ধান্তে মাননীয় উপদেষ্টার সাথে আমরা একমত পোষন করেছি কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহা না করে তার বিপরীতমূখীঅবস্থান নিয়ে বৈধ পদ্ধতির জিগজাগ ইটভাটায় জরিমানা ও ভাংচুর করছেন। আমরা কোন অবস্থাতেই এই সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলেদিতে চাই না কিন্তু বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের মদদপুষ্ট বসুন্ধরা, কনকর্ড সহ আধিপত্যবাদী প্রতিষ্ঠান সমূহ ইট শিল্পকে ধ্বংশের দিকে ঠেলেনিচ্ছে এবং বর্তমান সরকারের মখোমুখি আমাদেরকে দাড় করানোর চেষ্ঠা করছে।
বিক্ষোভ শেষে সাতদফা দাবিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্বারকলিপি পেশ করে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির পক্ষ থেকে স্বারকলিপি পেয়েছি। তাদের দাবিগুলো শুনেছি। যথা সময়ে স্বারকলিপির কপি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার দপ্তরে প্রেরণ করা হবে। একই সাথে চুয়াডাঙ্গা ইটভাটা মালিকদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
সাতদফা দাবিগুলো হলো: ১. ২০১৩ সনের ইটভাটা নিয়ন্ত্রন আইনের জিগজাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও উক্ত আইনের ৮(৩) (ঙ) এবং ৮ (৩) (খ) উপ-ধারায় “দূরত্ব নির্দিষ্ট” করনের কারণে দেশের কিছু জিগজাগ ইটভাটার মালিকগণ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছে না। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলন এবং ট্যানেল বিলন এর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দুরত্ব ১০০০ মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার নির্ধারণ করেছে। তাই আমাদের জিগজ্যাগ ভাটার জন্য উক্ত আইনের ৮ (৩) (৬) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দুরত্ব ৪০০ মিটার এবং আইনের ৮ (৩) (খ) এ বনের দুরত্ব ৭০০ মিটার করে লাইসেন ও ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারীর মাধ্যমে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি। ২. জিগজাগ ইটভাটায় কোন প্রকার হয়রানী বা মোবাইল কোর্ট করা যাবে না। যদি এটি হয় তাহলে আমরা ভ্যাট টেক্স দেয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো। ৩. কোন ইটভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারী ভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে বন্ধ করতে হবে। ৪. মাটি কাটার জন্য ডিসির প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বিধান বাতিল করতে হবে। ৫. পরিবেশগত ছাড়পত্র, ডি.সি লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স সহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি ইস্যু/নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়ন পত্র বাধ্যতামূলক ভাবে জমা দেয়ার বিধান করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করছি। ৬. ইটভাটাকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা দেয়ার দাবী করছি। ৭.ইটভাটা পরিচালনায় দীর্ঘ মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, আমাদের দাবিগুলো না মানলে দ্রুতই বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সবকটি ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকরা।