সিলেট শহরে সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার মিলিয়ে প্রতিদিন মেডিকেল বর্জ্য উৎপন্ন হয় প্রায় ২০ মেট্রিক টন। এ বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হয় নগরী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকা সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ রোড ঢাকা সিলেট রেল লাইনের পাশে পাইরারচকে। জায়গাটি সমতল কৃষি জমি বিশাল বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে আবাসিক এলাকা, গ্রাম কৃষি জমি খাল বিল। এখানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত বর্জ্য ফেলার জায়গা। ২০১৭ সালে বর্জ্য পরিশোধনের চুক্তভিত্তিক দায়িত্ব পায় প্রিজম ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারী সংস্থা। ২০১৯ সালের আগষ্ট থেকে পুরোপুরিভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত যান্ত্রিক সল্পতা পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব কাটিয়ে উঠেতে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি। কি এক অদৃশ্য কারণে প্রিজম ফাউন্ডেশনের কাজের অব্যবস্থাপনা আর অসংগতি গুলো সিটি কর্পোরেশনের নজরে আসছেনা। সেখানে সরেজমিনে দেখা যায় চারিদিকে অসহ্য দুর্গন্ধ, খোলা ড্রামের মুখ এবড়োখেবড়ো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সিটি থেকে নিয়ে আসা ট্রাক ভর্তি মেডিকেলের বর্জ্য। হাতেগোনা লোকবল দিয়ে চলছে সনাতন পদ্ধতিতে বর্জ্য নামানো উঠানো এবং আলাদা করার কাজ। এসব কাজের ছবি তোলার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারী করে রেখেছে প্রিজম কর্তৃপক্ষ কোন অবস্থাতে ছবি তুলেতে দিতে রাজী নন প্রিজম বাংলাদেশের জেলার কোঅর্ডিনেটর মইনুল ইসলাম, এত কড়াকড়ি দেখে যে কারো মনে হতে পারে তিনি কোন পারমানবিক গবেষণাগারে ঢুকে পড়েছেন। বাইরের খোলা জায়গার ওপর টিনশেডের নীচে পাকা গর্ত করে কিছু ব্যান্ডেজ পুড়ানো ছাঁই, ময়লা শক্ত পদার্থ পাম্পে বুদবুদ তোলে গুলিয়ে ফেলার পদ্ধতি আর ইনসিনারেটর মেশিনটি ঘুরে দেখানো ছাড়া সাধারণ বর্জ্য এবং ক্লিনিকাল বর্জ্য বাছাইকরণটি দেখাতে রাজি হলেন না প্রিজম ফাউন্ডেশনের এই কর্মকর্তা। করোনা রোগীদের মাস্ক বা ব্যবহৃত কাপড় বা চিকিৎসায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র এখানে আলাদা করে আসতে দেখেছেন কিনা যেটাকে বায়োসেফটিক্যাল ব্যাগ বলা হয়। এখানকার সুপারভাইজার শাহীন বললেন না জানালেন না আলাদা করা কিছুই আসেনা। প্লাস্টিক আর কাঁচ জাতীয় পদার্থের হাত দিয়ে নাড়াচাড়া আর বস্তাবন্দীর ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ গুলো স্বাভাবিক কৃষি কাজের মতোই বা ঘর গৃহস্থালির মতো করছেন এখানকার কর্মিরা যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরী করছে।প্লাস্টিকের বোতল সিরিঞ্জ স্যালাইন ইনফিউশন সেট এগুলো কি করা হয় জানতে চাইলে কোঅর্ডিনেটর মইনুল ইসলাম জানান এগুলোকে বিশুদ্ধ করে টুকরো টুকরো করা হয়। তারপর কি করেন জানতে চাইলে তিনি জানান ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সূত্র বলছে প্লাস্টিকের বোতল সুই সিরিঞ্জ সেট ঢাকায় ভাঙ্গাড়ীর দোকানে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এব্যাপারে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান আমার কোন উপায় নেই এর বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মেডিকেল কলেজ ও ক্লিনিকগুলো থেকে মূলত সলিড (শক্ত) এবং লিকুইড এ দুই ধরনের ময়লা উৎপন্ন হয়। অটোক্লিনিংয়ের মাধ্যমে সলিড ময়লা অপসারণ করা হলেও লিকুইড ময়লা অপসারণ বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল। এ ধরণের ময়লা বিশুদ্ধকরণের ব্যবস্থা এখানে নেই নামেমাত্র বিশুদ্ধকরণ লিকুইড ব্লিচিং ফসফরাস কিছু কেমিক্যালস দিয়ে বুদবুদ তৈরী করে ছেড়ে দেয়া হয় খালে বিলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটা জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ।তারা বলছেন ক্লিনিকেল লিকুইড এলাকার কৃষি জমি খাল বিল জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকীর মুখে ফেলবে। ভয়ংকর ঝুঁকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্য। মানব শরীরে মরণব্যধির সৃষ্টি করবে এসব লিকুইড বর্জ্য। প্রিজম ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের চীফ ইঞ্জিবিয়ার নূুর আজিজুর রহমান এব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার নূর আজিজুর রহমানের সঙ্গে তার মুঠোফোনে একসপ্তাহ ধরে একাদিকবার যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।