গোটা দেশে নিত্যপণ্যের বাজার বৃদ্ধিতে মানিকগঞ্জের বাজারেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। একদিকে করোনার ভয়াল থাবা আরেক দিকে বন্যা। দুইয়ের সংমিশ্রণে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে মনে করেন জেলার সচেতন মহল। নুন আনতে পানতা ফুঁরায় শ্রেণির মানুষের মাঝে এর প্রভাব বেশি পড়েছে। মানিকগগঞ্জ সদরসহ আশেপাশের উপজেলার বাজার ঘুরে দেখা যায়, পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দরে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক আর অস্থিরতা। মানিকগঞ্জ সদরসহ উপজেলার বাজার ভেদে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৭ শত থেকে ২ হাজার ৮ শত, ঊনত্রিশ ও আটাশ চালের বস্তা ২ হাজার ২ শত টাকা আর আতপ চালের বস্তা বেড়ে ২ হাজার ১শো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানিকগঞ্জ পৌর মার্কেটের ক্রেতা আসাদ মিয়া জানান, চালের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেতে পারে আশঙ্কায় লকডাউন কালে সাধারণ মানুষ বাড়তি চাল কেনার সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এখন তারা বলছেন বন্যার কারণে চালের দাম বেড়েছে। ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী রতন চাকলাদার বলেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রাদার্স রাইস এজেন্সির মালিক হায়দার আলী জানান, মিলাররা চালের দাম বাড়ালে আমাদেরও বাড়তি দামে কিনতে হয়। ঘিওর বাজারের ডাল ব্যবসায়ী প্রভাত কবিরাজ বলেন, ডালের বাজারও চালের দামের সাথে পাল্লা দিয়ে সমানে সমান ধাবমান। আমরা পাইকারী বাজার থেকে যেভাবে ক্রয় করি, সে অনুপাতে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। শিবালয় উপজেলার বরংগাইল হাটে গিয়ে জানা যায়, বেশ কয়েকমাস যাবৎ পেঁয়াজের বাজারেও বিরাজ করছে অস্থিরতা। আড়ৎদারদের দেয়া তথ্যমতে, চট্রগ্রাম বন্দরে নিয়মিত পেঁয়াজের জাহাজ ভিড়ছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না বাজারে। কারণ এখনও বাজারে দেশী পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আড়ৎদার আরিফ মিয়া জানান, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার পরও আমদানীকারকদের কাছ থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। হরিরামপুরের ঝিটকা বাজারের ক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, করোনার প্রভাবে আমাদের আয় রোজগার প্রায় শূণ্যের কোঠায় আসলেও নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। বৌ বাচ্চা নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। গোলড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি সব ধরনের সবজির দাম চলে গেছে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আলু, পটল, বেগুন, লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়স, পেঁপে,ঝিঙ্গের পর্যাপ্ত আবাদ হলেও সম্প্রতি বন্যায় বেশিরভাগ সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। মুরাদ নামে এক সবজি বিক্রেতা জানান, কোন সবজিই এখন আর আগের দামে নেই। খুচরা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জানান, সব ধরনের সবজির চাষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় পাইকারী বাজারে সবজির যোগান কম। সবজির মূল্য বেশি হওয়াতে নিম্ন আয়ের মানুষের ঝুঁকেছেন ডিমের বাজারে। কিন্তু সেখানেও মিলছে না স্বস্তির বাতাস। করোনার আগে ডিম ছিল ২৪ থেকে ২৬ টাকা হালি,এখন সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা হালি দরে। পাইকারী ডিম ব্যবসায়ী ইমদাদ হোসেন জানান, সম্প্রতি বন্যায় অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলার কনজ্যুমার আ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক এ.বি.এম শামসুন্নবী তুলিপ জানান, বন্যার পানিতে সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বাজারে গাভীর দুধের বাজারও সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। এখন এক কেজি দুধ কিনতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৯০ টাকা। যা ক্রয়ের কথা নিম্নআয়ের মানূষ কল্পনাও করতে পারে না। দুধ বিক্রেতা রফিক মিয়া বলেন, কাঁচা ঘাসের সংকট ও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দুধের দাম বাড়তি। বাজারে সব ধরনের মাছের সরবরাহ মোটামুটি ভাল থাকলেও রহস্যজনক কারণে বাজার দর উর্ধ্বমুখী। সরকার খুচরা বাজারে আলুর দর ৩০ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা এখনও ৫০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করছেন। জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল দৈনিক নবচেতনা-কে জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব সময় জেলা ও উপজেলার বাজারগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। আলু ব্যবসায়ীদেরকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।