মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে এক বছরের সেশনজট সৃষ্টি হতে পারে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি সেমিস্টার পিছিয়ে যেতে পারে। এ জটের ধাক্কা সামাল দিতে অন্তত দুই বছর লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে বাড়তি ক্লাস আর নির্ধারিত ছুটি বাতিল করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলে এ সংকট অনেকটাই এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ধাপে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩১ আগস্টের পর যদি আর ছুটি নাও বাড়ে, তবু ৬ মাসের ছুটিতে ৯ মাস থেকে এক বছরের সেশনজট হবে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে অক্টোবর-নভেম্বরে নতুন সেমিস্টার শুরু করা যাবে। তবে সাধারণভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে বিদ্যমান সেমিস্টার। কেননা প্রতিষ্ঠান খুলেই পরীক্ষা নেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে দেড়-দুই মাসের প্রস্তুতির সময়ও দিতে হবে।
ইউজিসির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, উচ্চশিক্ষার বিদ্যমান ক্ষতি কমিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত দুই বিকল্প ভাবনাই উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে-সাধারণ ছুটির আগে নেয়া শ্রেণি কার্যক্রমে শেষ করা কোর্সের ওপর বিশেষ ব্যবস্থায় চলতি সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়ে রাখা। এটি সম্ভব হলে ছয় মাসের সেশনজট এখানেই কমে যাবে। এরপর জুলাইয়ে শুরু হওয়া সেমিস্টারের শ্রেণির পাঠদান অনলাইনে নেয়া। এ দুই কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সেশনজটই হবে না।
আরেকটি বিকল্প হচ্ছে- এখন পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে সেশনজট মেনে নিয়ে দুই বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা করা। সেটি হচ্ছে- যখনই ক্যাম্পাস সচল হবে, তখন থেকে কোর্সের শ্রেণি কার্যক্রম ও ল্যাবরেটরি ওয়ার্ক সাধারণভাবে চলবে। এক্ষেত্রে কোর্সের কিছু ‘টপিক’ (পাঠের বিষয়) বাদ দেয়া যেতে পারে।
এভাবে করা হলে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে আনা যাবে। সে ক্ষেত্রে ৯ মাস থেকে ১ বছরের জট তৈরি হলেও তা দুই বছরে পূরণ সম্ভব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, আসলে ক্ষতি রোধে আমরা কোন পরিকল্পনায় আগাব, তা নির্ধারণ করবেন ভিসিরা। আমাদের অনেক চিন্তাভাবনা রয়েছে, কিন্তু কারও উপর আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। আলোচনার মাধ্যমেই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ড. কাজী শহীদুল্লাহ আরও বলেন, সেশনজট যেটা তৈরি হয়েছে, সেটা দূর হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কতটা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে তার ওপর। এক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ নেতৃত্ব এবং আন্তরিকতা খুবই দরকার। বিভিন্ন বিকল্প আছে। সেগুলো প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে আমি মনে করি, এই জটের ধকল সামলাতে দুই বছরের পরিকল্পনা প্রয়োজন হবে। দুই বছরের মধ্যে আমরা আবারও সেশনজটমুক্ত উচ্চশিক্ষা পাব।