ePaper

বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ছে ইলিশ খুশি জেলেরা

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ মাছের মোকাম কুয়াকাটা-আলীপুর-মহিপুর ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে। গত দুই দিনে হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এতে হাসি ফুটেছে জেলে, ট্রলারমালিক, আড়তদার, ব্যবসায়ীদের মুখে। কর্মচাঞ্চল্য ফিরছে উপকূলের মৎস্য বন্দরগুলোতে। জেলে পরিবারের দীর্ঘদিনের হতাশা কেটে গেছে। উপকূলের জেলেপাড়ায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বৃহৎ মাছের মোকাম কুয়াকাটা-আলীপুর-মহিপুর মৎস্যপল্লিতে বিপুল পরিমাণে ইলিশ উঠেছে। সাগর থেকে ইলিশভর্তি সারি সারি ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে। ওইসব ট্রলার থেকে ইলিশ নামানো হচ্ছে। পাইকারদের কাছে মাছ বিক্রি করছেন আড়তদাররা। কেউ কেউ আকার ভেদে মাছ আলাদা করছেন। কেউ ইলিশের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ সেই ডোল (প্যাকেট) দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। অন্যদিকে, খুচরা মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ। গত কয়েকদিন গড়ে এ মোকাম থেকে ৪৫-৫০ টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন মোকামে যাচ্ছে। ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছও শিকার করছেন জেলেরা। তবে বড় সাইজের ইলিশের পরিমাণ কিছুটা কম। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা দরে। ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরে আসা জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আছে। জাল ফেললেই ধরা পড়ছে। তবে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে কম। দীর্ঘদিন পর ইলিশের দেখা পেয়ে তারা অনেক খুশি। এদিকে সামনে পূর্ণিমার জো থাকায় জেলেরা ঘাটে ফিরতে শুরু করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় সাগরে ফিশিং শেষে আলীপুর-মহিপুর ঘাটে ফিরে এসেছে ২০-২৫টি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারই মাছ পেয়েছে। কথা হয় জেলে হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাগরে প্রচুর ইলিশ আছে। কিন্তু স্রোত বেড়ে যাওয়ায় জাল ফেলা যাচ্ছে না। স্রোতের তোড়ে জাল পেঁচিয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। তাই ঘাটে ফিরে এসেছি। পূর্ণিমার জোবার (জো) প্রভাব কমলেই মাছ শিকার করতে সমুদ্রে যাবো। মাছ পেয়ে আমরা খুশি।’ মৎস্য ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরছে। প্রতিদিন গড়ে শুধু আলীপুর বন্দরে ২০-২৫ টন ইলিশ ওঠে। মাছের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কিছুটা কমছে। এক কেজি ওজনের প্রতি মণ ইলিশের পাইকারি দাম ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম সাইজের দাম ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা, ৪০০-৬০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের দাম ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। জাটকা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়।’ এফবি জামাল নামের ট্রলারের মাঝি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে ছোট সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে তুলনামূলক অনেক কম। ট্রলিং ট্রলার বন্ধ করলে মাছ বাড়বে। আমরা চার দিন আগে ১৮ জন জেলে সাগরে গিয়েছিলাম। দুই দিন ফিশিং করার পর আজ (বুধবার) সন্ধ্যায় ঘাটে ফিরে এসেছি। ছোট সাইজের ১০ হাজার ইলিশ পেয়েছি। এখন পর্যন্ত সব মাছ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে তোলা হয়নি। ৮০ থেকে ৮৫ মণ মাছ হতে পারে। আশা করছি, ২৪-২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হবে।’ এফবি তামান্না নামে ট্রলারের মাঝি ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘আমরা লম্বা জাল নিয়ে মাছ ধরি। আমার জাল সাড়ে তিন ইঞ্চি থেকে চার ইঞ্চির। আমি ৬৫০ পিস বড় সাইজের ইলিশ পেয়েছি। আজ দুপুরে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। ট্রলিং জাল, ছোট ফাঁসের জাল বন্ধ করলে আরও বেশি মাছ পাওয়া যেত।’ আলীপুর মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী ইউসুফ হাওলাদার বলেন, ‘বর্তমানে পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিলেছে, হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। আলীপুর-মহিপুরে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ টন ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে। মৎস্য সংশ্লিষ্ট সবাই খুশি। তবে এখন জাটকা ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি। তাই জাটকা ইলিশ নিধনের ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বৃদ্ধি করলে বড় সাইজের ইলিশ আরও বাড়বে।’ কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘সাগরে বেশ কিছুদিন ইলিশের খরা চলছিল। বর্তমানে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। বৃষ্টি থাকলে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে। বন্দরে ইলিশসংশ্লিষ্ট সবাই লাভবান হবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *