ePaper

নাতনির কাছে সব জমি হারিয়ে পথে পথে নানি

নড়াইল প্রতিনিধি

স্বামী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়েছেন ছিয়ারন নেসা (৮৫)। বুকের দুধ খাইয়ে মানুষ করেছেন আড়াই মাস বয়সী নাতনি কমলাকে। নিজের ৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৮ বছর আগে সেই নাতনির স্বামীকে সৌদি আরব পাঠিয়েছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই নাতনিই এখন বৃদ্ধ নানিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। অপর দিকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ঠাই হচ্ছে না ছেলে বাবু মোল্যার বাড়িতে। ঘরবাড়ি জায়গা জমি হারিয়ে অসহায় এই বৃদ্ধা নানী নিরুপায় হয়ে এক মুঠো ভাতের জন্য গ্রামের মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। শেষ জীবনের করুন দৃশ্য দেখে এগিয়ে আসেন গ্রামের মানুষ। বৃদ্ধা ছিয়ারনকে নিয়ে নাতনি কমলার কাছে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃদ্ধা নানীকে ভাত কাপড় দেওয়ার অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু নানীকে খেতে দিতে অসম্মতি জানান কমলা। এতে স্থানীয়রা জানান, নানীকে খেতে না দিলে জমি ফেরত দিতে হবে। এতে বাড়ি থেকে বের হয়ে কমলা স্থানীয়দের নামে একটি অভিযোগ করেন সদর থানায়। ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের চরশালিখা গ্রামে। এখন ছিয়ারন নেসা ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে দুই মুঠো ভাতের আশায় গ্রামের এ বাড়ি সে বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ছিয়ারন নেছা বলেন, নাতনী কমলাকো ছোট থেকে আমি তারে বড় করেছি। সে আমার জমি নিয়ে গেছে ফাঁকি দিয়ে। আমি তারে পাঁচ কানি জমি দিতে চেয়েছিলাম। সে আমার সব নিয়ে গেছে। আমি কিছু ঠিক পায়নি। পরে শুনি আমার সব জমি নিয়ে গেছে। আমার জমি জাতি নিছে আবার আমারে খেদায় দিছে। আমার জমি ছয়াল কে দি নাই, মায়েকে ও দি নাই। এহন আমারে ছলেরা ও দেহে না। মায়েরা ও দেহে না। আমি ঠেলা খেয়ে বেড়ায়। গ্রামের মানুষ আমারে দেহে খাতি দেয়। চর শালিখা গ্রামের মো. মুরাদ শেখ বলেন, আমরা গ্রামবাসী ছিয়ারন নেসাকে তার নাতনী কমলার বাড়ি উঠায় দিয়েছি। এতে তারা সম্মতি না। তারা তার নানীকে রাখবে না। আমারা যারা বলে কয়ে বাড়িতে উঠায় দিয়েছি সেই কয় জনের নামে থানায় অভিযোগ করেছে। এখন দারাগা এসে আমাদের চোখের ঘুম কেড়ে নিছে। প্রতিবেশিরা জানান, কমলার যখন দুই মাস বয়স তখন থেকে তার নানী তাকে মানুষ করেছে। বড় হলে তাকে বিয়ে দিয়েছে। তার নানীর কাছে সে পাঁচ কানি জমি চেয়েছে। নানী সেটি দিতে ও চেয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে কমলা ও তার স্বামী তার নানীর নিকট হতে অন্যান্য জমি লিখে নিয়েছে। প্রতিবেশী ইয়াদুল শেখ বলেন, এই কমলার জন্য তার নানী কি না করেছে। তার স্বামীকে জমি বিক্রি করে বিদেশ পাঠায়ছে। তিন মাস বয়স থেকে লালন পালন করেছে। তার চার সনÍান বৃদ্ধ মহিলা মানুষ করছে। এখন এই বৃদ্ধ মহিলা দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। পরের বাড়ি ভিক্ষা করে খায়। এই মহিলা এখন খুব অসহায়। বৃদ্ধা ছিয়ারন নেছের ছেলে বাবু মোল্যা বলেন, তার এত সম্পত্তি থাকতে অন্য লোকের নামে লিখে দেছে। তাই মনের রাগেতে খোঁজ নি না আমরা। তবে এখন খেঁতে দিতে হচ্ছে। বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সাখা কাজী বলেন, কমলা হচ্ছে সিয়ারুনের মেয়ের মেয়ে। কমলার যখন বয়স ৩ মাস তখন তার মা মারা যায়। সেই থেকে কমলাকে তার নানী বড় করে। তার পর গ্রামের সাইফুল শেখের সাথে তাকে বিয়ে দেয়। এর পর কমলার নানী কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে সাইফুলকে বিদেশ পাঠায়। পরে নানীর যে বাকি সম্পত্তি ছিল ওই কমলা কবলা দলিলে লেখে নেয়। তার ছেলে বাবু মোল্যাকে একটু জমি ও দেয়নি। এখন কমলা তার নানীকে ভাত কাপড় দেয় না। গ্রামের মানুষের বাড়ি খেয়ে বেড়ায়। তার নানীর এহেন অবস্থা দেখে গ্রামের মানুষ কমলাকে বলেন, তোর নানীকে ভাত দিতে হবে। অথবা তোর জমি ফেরত দিতে হবে। এই অবস্থায় কমলা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এখন জানতে পারি আমি সহ গ্রামের কয়েকজনের নামে চাঁদা দাবির অভিযোগ দিয়েছে। অভিযুক্ত কমলা রানী বলেন, জমি লিখে দিছে অনেক আগে। ২০ বছর ধরে নানী আমার সাথে খায়। গ্রামের দলাদলির কারনে কতিপয় কিছু মানুষের পরামর্শে নানী এহেন অভিযোগ করছেন। কিছু মানুষ নানীকে ভাত কাপড় দিতে হবে দাবি করে আমাকে শারিরীক নির্যাতন করেছেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি। নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, নানীর সম্পত্তি লিখে নিয়ে খেতে দেয় না। এ ঘটনাটি আমরা অনুসন্ধান করছি। অনুসন্ধান করে সঠিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে এ ঘটনায় কমলাকে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে নির্যাতনের ও একটি অভিযোগ পেয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *