রফিকুল ইসলাম,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের গ্রামীণ জীবনের এক সময়ের প্রাণকেন্দ্র ছিল কাচারি ঘর। গ্রামের সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকাণ্ডের প্রায় সবকিছুই এই ঘরের চারপাশে ঘুরে বেড়াত সালিশ, বিবাহের প্রস্তুতি, অতিথি আপ্যায়ন, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সিদ্ধান্তও। গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার ইতিহাসে কাচারি ঘর ছিল শুধু স্থাপত্য নয়, সামাজিক ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক। স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, কাচারি ঘর প্রধানত গ্রামের বড়লোক বা জমিদার বাড়ির আঙিনার সামনে নির্মিত হতো। কাঠের দোচালা এই ঘরে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতেন। নতুন অতিথি এলে প্রথমেই এখানে বসানো হতো। বিবাহ বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের আগের দিনগুলোতে কাচারি ঘর হয়ে উঠত প্রস্তুতি ও সমন্বয়ের কেন্দ্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব ঘরের অস্তিত্ব ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে। সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন, জমিদারি ব্যবস্থার বিলুপ্তি, আধুনিক বসতবাড়ির নির্মাণ এবং গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতি উদাসীনতা এসব মিলিয়ে কাচারি ঘর আজ প্রায় বিলুপ্ত। স্থানীয়রা আরো জানান, দুই-তিন দশক আগে পাথরঘাটায় চোখে পড়ত বেশ কয়েকটি কাচারি ঘর, কিন্তু এখন মাত্র কয়েকটি ভাঙাচোরা ঘরই রয়ে গেছে। স্থানীয়রা মনে করেন, কাচারি ঘরের বিলুপ্তি শুধু স্থাপত্য নয়, গ্রামীণ সামাজিক সংস্কৃতিরও বিলুপ্তি নির্দেশ করে। আগে গ্রামের মধ্যেই সালিশ বা সামাজিক সমাধান হতো; এখন তা ইউনিয়ন পরিষদ, থানা বা আদালতের দিকে চলে গেছে। একই সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন ও সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রথাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই কাচারি ঘর সম্পর্কে অজানা। স্থানীয় সচেতনরা মনে করেন, যদি এখনই এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এটি কেবল গল্পের মতো হয়ে থাকবে। এলাকার বিত্তবানদের অনেকেরই আশা, অন্তত একটি কাচারি ঘর সংস্কার বা নতুনভাবে নির্মাণ করে এটিকে ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হোক। যাতে গ্রামবাসী আবারও অতীতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।
