ePaper

মাছ-মাংসের দাম চড়া, সবজি-ডিমে চলছে মেসের খাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাকরি কিংবা পড়াশোনার জন্য গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই মেসে থাকেন। এখানকার বেশিরভাগ মেসের সদস্যই শিক্ষার্থী। সবজির দাম স্বাভাবিক থাকলেও অন্যান্য জিনিসের দাম বেশি থাকায় এসব শিক্ষার্থীর খাবারের খরচ বেড়েছে। এর সঙ্গে ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ায় গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এজন্য শাক-সবজি, ডাল আর ডিম খেয়ে জীবন পার করছেন তারা। তারপরও অনেকেই মাস শেষে হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, একেএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আহম্মেদ উদ্দিন শাহ্ শিশু নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এসকেএস স্কুল এন্ড কলেজ, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে শহরের কলেজ পাড়া, ফয়জারের মোড়, টাবু পাড়া, সুন্দর জাহান মোড়, পলাশপাড়া, থানা পাড়া, বাংলাবাজার, খানকা শরিফ ও স্টেশন এলাকায় কমপক্ষে দুই শতাধিক মেস রয়েছে। এসব মেসে অনন্ত দুই থেকে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী থাকেন, যাদের অধিকাংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। একটি মেসের শিক্ষার্থী মোবাশ্বের আল কাইয়ুম (১৮)। তিনি দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নেবেন। তাই বুকভরা আশা নিয়ে এসেছেন গাইবান্ধা শহরে পড়াশুনা করতে।

কাইয়ুম জাগো নিউজকে বলেন, তার বাবা পেশায় কৃষক। তিন ভাই-বোনের মধ্য সবার বড় তিনি। সুন্দরগঞ্জের হরিপুর গ্রামে থাকেন বাবা-মা ও ছোট বোন। কাইয়ুমের ছোট ভাই রংপুর শহরের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। বাবার একার আয়েই চলে সংসার। দুই বছর আগে তিনি গাইবান্ধা শহরে পড়াশুনা করার জন্য আসেন। শুরুতে তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে মেসের সব খরচ হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে চার হাজার টাকা দিয়েও চলতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

কাইয়ুমের সঙ্গে একই মেসে থাকেন আরও ১৪ জন। তাদের কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছেন। আবার কেউ ছোটখাটো চাকরি করে নিজের খরচ মেটাচ্ছেন। গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মো. খোকন মিয়া বলেন, বর্তমানে কাঁচাবাজারসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু মাছ, মাংস, তেলসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম এখনও চড়া। তাই মেসে থেকে পড়াশুনা করে তাদের ভালো খাবার জোটে না। শাক, সবজি, ভর্তা, ডাল আর ডিমে চলছে জীবন। তিনি আরও বলেন, বাসা বা টিউশনি থেকে যে টাকা পাই, তা দিয়ে জীবন চলার মতো না। কষ্ট করছি পড়াশুনা করে ভালো একটা চাকরির জন্য। মেসের আরেক শিক্ষার্থী মো. আলাল মিয়া বলেন, বাসাভাড়া, গ্যাস সিলিন্ডার, বিদ্যুৎ বিল, গৃহকর্মী ও খাবারের খরচ মিলিয়ে জনপ্রতি মাসিক খরচ পড়ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। সেহরিতে কী খাচ্ছেন জানতে চাইলে আলাল মিয়া বলেন, করলা ও আলুভর্তা হয়েছে। একটু ভালো-মন্দ খেতে চাইলে মাসের শুরুর দিকে খাওয়া হয়। পরে টাকার হিসাব মেলে না। মেসে থাকা আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের খাবারের তালিকায় অধিকাংশ সময় থাকে ডিম কিংবা সবজি। সপ্তাহে এক-দুইবার ব্রয়লার মুরগি কিনতেন আগে। এখন তাও কমিয়েছেন। সবজি-ডিমে চলছে খাবার। ইচ্ছা হলে কিনছেন কম দামি মাছ। কথা হয় প্রফেসর কলোনির আবাসিক এলাকায় থাকা সদ্য স্নাতকোত্তর পাস শিক্ষার্থী সাগর আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি মাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খাওয়ার খরচ বেড়েছে। একইসঙ্গে অন্য খরচও। এই বয়সে বাসায় টাকা চাইতেও লজ্জা হয়। আরেক শিক্ষার্থী মোজাহিদ মিথুন বলেন, সময় ভালো যাচ্ছে না। বাসা থেকে খরচের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতেও চাচ্ছে না। টিউশনি করার জন্য বড় ভাইদের দ্বারস্থ হচ্ছি। কিন্তু টিউশনিও পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে খুব কষ্ট করে মেসে থাকতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ১৫ টাকা, বেগুন ১৫-২০ টাকা, টমেটো ১০ টাকা, শিম ২০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গাজর ২০ টাকা, পেঁপে ১৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, শসা ২০ টাকা, পটোল ৮০, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেঁয়াজ ৩০ টাকা, আদা ১২০ টাকা, রসুন ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, চিনি ১২০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, কক মুরগি ২৪০ টাকা কেজি ও ডিম ১০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। এসব বিষয়ে কথা হলে পুষ্টিবিদ গোলাম রসুল বলেন, প্রতিটি মানুষের দৈহিক গঠনের নির্দিষ্ট একটা বয়স থাকে। সেই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। এসময় শিক্ষার্থীরা পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারলে অল্প বয়সে বয়সের ছাপ, শারীরিক গঠনে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ক্যালসিয়ামে ঘাটতি হতে পারে। এছাড়া একজন মানুষ দৈহিক গঠনের ওপর নির্ভর করে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সেজন্য মেস বা আবাসিক থাকা বলে কোনো কথা নয়, জীবন বাঁচানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *