নিজস্ব প্রতিবেদক:
পহেলা বৈশাখ ঘিরে জমে উঠেছে মৃৎশিল্পীদের কর্মযজ্ঞ। পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পাল পাড়ায় এখন দিন-রাত চলছে হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা ও সাজসজ্জার সামগ্রী তৈরির ধুম। শত বছরের পুরনো এই শিল্পকে ঘিরে বৈশাখ মাস যেন তাদের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। নারী-পুরুষ সবাই মিলে কাজ করছেন দিন-রাত কারও হাতে মাটি, কারও হাতে রং, কেউ আবার আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে পোড়াচ্ছেন মাটির সামগ্রী।
বাউফলের পাল পাড়ায় মৃৎশিল্পের চর্চা চলছে কয়েক প্রজন্ম ধরে। এ পাড়ার মানুষদের প্রধান জীবিকা মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট, হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, দেবদেবীর মূর্তি ইত্যাদি। বৈশাখ মাস এলেই বাড়ে এই শিল্পীদের কদর। স্থানীয় হাট, গ্রামীণ মেলা এমনকি শহরের বাজারগুলোতেও চাহিদা বাড়ে এসব পণ্যের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে এক সময় মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা থাকলেও প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে এখন সারা বছরই এ পণ্য উৎপাদন হয়। এক সময় শুধু শোপিস ও ফুলের টব তৈরি করা হতো। বর্তমানে প্লেট, গ্লাস, বাটি, চায়ের কাপ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সাইজের বাটিসহ ডিনার সেট তৈরি হচ্ছে। গুণগত মান সম্পন্ন এবং নান্দনিক হওয়ায় এসব পণ্য উৎপাদন করে সারা দেশে তাক লাগিয়েছেন তারা। এখানকার মৃৎশিল্পের অন্যতম রূপকার ছিলেন রাজেশ্বর পাল। এক সময়ে তিনি মেলায় ঘুরে ঘুরে খেলনাসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করতেন। তিনি আজ বেঁচে না থাকলেও তার প্রতিষ্ঠানের তৈরি পণ্য এখন সরবরাহ করা হচ্ছে আড়ংয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে। পালপাড়ার এ মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় অর্ধশত পরিবার। এখানে দীর্ঘদিন কাজ করছেন এমন শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন অনেকেই। মৃৎশিল্পের শ্রমিক মো. নিজাম মোল্লা বলেন, আমি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ মৃৎশিল্পের কাজ করি। বৈশাখ এলে আমাদের বিভিন্ন কাজের অর্ডার থাকে। আমরা বেশিরভাগ সময় দিন-রাত মিলিয়ে কাজ করি। প্লেট, গ্লাস, মগ, হাড়ি-পাতিল ও মিষ্টির পাতিলের কাজের চাপ বেশি। অর্ডার ভালোই আছে আমরা কাজ করে মোটামুটি ভালো আছি।
মৃৎশিল্পের তরুণ উদ্যোক্তা হৃদয় রায় বলেন, বৈশাখকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল এবং আমার যা আশা করেছি তার থেকে অধিক বিক্রি হচ্ছে। পহেলা বৈশাখ ঈদের পরে হওয়ার কারণে আমার সময় পেয়েছি। যার কারণে কেউ অনলাইনে অর্ডার করলে দ্রুত দিতে পারছি। বিশেষ করে আমাদের বাউফলের ডিনার সেটের আইটেমগুলো খুবই প্রসিদ্ধ। এগুলোর কোয়ালিটি এতো চমৎকার যে বাংলাদেশের অন্য কোথাও এমন হয় না। বিশেষ করে ঢাকার মধ্যে গুলশান, চট্টগ্রাম, সিলেটে আমাদের পণ্য বেশি যাচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ১০০ কার্টনের অধিক অনলাইন ভিত্তিক ডেলিভারি যাচ্ছে। এছাড়া আমার অফলাইনেও পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু অনলাইনে বিক্রি বেশি হয়।
বরুণ মৃৎশিল্পের স্বত্বাধিকারী বরুন পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছরই আমাদের একটা টার্গেট থাকে পহেলা বৈশাখের জন্য। বৈশাখের আগে প্রচুর মাল স্টোকে থাকে। সারাদেশ থেকে মানুষ আসতেছে পাইকারি কেনার জন্য এবং কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরাও ২-১টা মেলাতে অংশগ্রহণ করব। সব মিলিয়ে আমাদের এখন গরম গরম প্রস্তুতি চলছে। বৈশাখটা আমাদের পাল সম্প্রদায়ের জন্য আনন্দের সময়।