নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের ভিত্তিতে নতুন পরিকল্পনা ও সংস্কারের প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।
কর্মসূচিতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরা হয়েছে:
১. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র: জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র তৈরি করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তা প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে।
২. শেখ হাসিনার বিচার: বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান।
৩. আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা: বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি।
৪. সংস্কারের পর নির্বাচন: সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচনের আয়োজন না করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মার্চ ফর ইউনিটি: লাখো মানুষের ঐক্যবদ্ধ স্লোগান
বেলা তিনটা থেকে শহীদ মিনার এলাকা লোকারণ্য হয়ে ওঠে। উপস্থিত জনতার হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। শোনা যায়, “এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার” এবং “জুলাইয়ের প্রেরণা, দিতে হবে ঘোষণা” ইত্যাদি স্লোগান।
সমাবেশের বিশিষ্ট অতিথি ও বক্তাদের বক্তব্য
- শহীদ পরিবারের সদস্যরা: ৪ আগস্ট শহীদ আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, “আমাদের কান্না থামবে না, যতক্ষণ না খুনি হাসিনার বিচার নিশ্চিত হচ্ছে।”
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা: আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা বিচার ও সংস্কারের ভিত্তিতেই নতুন বাংলাদেশ গড়ব।”
- জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন: “১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র না দেওয়া হলে নতুন আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।”
কর্মসূচির বিশেষ উদ্যোগ
- তথ্যচিত্র প্রদর্শনী: আওয়ামী লীগ শাসনামলের গুম, খুন, ও দুর্নীতির তথ্যচিত্র প্রদর্শন।
- ডিজিটাল প্রচার: মঞ্চে স্থাপন করা ডিজিটাল স্ক্রিনে সমাবেশের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার।
- ড্রোন ক্যামেরা: নিরাপত্তা ও সমাবেশের চিত্র ধারণে ব্যবহৃত হয় ড্রোন।
বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়
বক্তারা একমত হয়েছেন যে, বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়া শেষ না হলে কোনোভাবেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য নুসরাত তাবাসসুম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিও তোলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা জিইয়ে রাখার অঙ্গীকার
মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, সরকার জনগণের দাবি উপেক্ষা করলে নতুন করে গণ-আন্দোলন শুরু হবে।
উপসংহার
নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কারের প্রশ্নে জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা হাত তুলে শপথ নেন যে, নিরপেক্ষ বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।