ePaper

আইইইএফএ’র প্রতিবেদন/নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজন বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে, বাংলাদেশকে বছরে ৯৮০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হতে পারে । ২০৪০ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে, ২০৩১-৪০ পর্যন্ত বাৎসরিক বিনিয়োগের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার। নীতিগত অনিশ্চয়তা, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, মুদ্রা ঝুঁকি ও অবনতিশীল সার্বভৌম ঋণমান এ খাতে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। সদ্য অনুমোদিত নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশে বড় আকারের বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য নীতিমালার মাধ্যমে একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে

বুধবার (২৫ জুন) আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়,নবায়নযোগ্য জ্বালানির ছোট প্রকল্পে (ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ, সৌরসেচ  ইত্যাদি) বিনিয়োগ বাড়াতে হলে, ঝুঁকি প্রশমনের স্কিম এবং বিশেষায়িত সবুজ অর্থায়ন তহবিল গঠন ও আমদানি শুল্ক ছাড় দেয়া যেতে পারে। ইউটিলিটি-স্কেল প্রকল্পে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে স্থিতিশীল নীতিমালা ও বিনিয়োগের পরিবেশ অপরিহার্য।

নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এই লক্ষ্য পূরণে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৯৩৩ থেকে ৯৮০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০৩১-৪০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১.৩৭ থেকে ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।

গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক ও বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বিষয়ক আইইইএফএ’র প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে এই বিপুল অর্থের চাহিদা শুধু সরকারী অর্থায়নের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়, এজন্য ব্যাপক বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন।

তবে হঠাৎ করে নীতিমালার পরিবর্তন, পাইপলাইন এ প্রকল্প না থাকা, জটিল ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া, ভূমির উচ্চ মূল্য, স্থানীয় মুদ্রার অস্থিরতা (স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন) এবং দেশের দুর্বল ক্রেডিট রেটিং বেসরকারি বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন শফিকুল আলম।

সংকট কাটাতে বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুদ্রা ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষ তহবিল গঠন করার পরামর্শ দিয়েছে আইইইএফএ। 

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত সরকারের সময় প্রতিযোগিতাবিহীনভাবে অনুমোদিত ৩১টি বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগত স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যারান্টি পুনর্বহাল, প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ভূমি বরাদ্দ এবং ব্যাংকিং ও সার্ভিস সেক্টরের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, পেমেন্ট নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করতে সরকার ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন ধারা’ পুনর্বহাল অথবা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকারীদের আয়ের নিশ্চয়তা দিতে একটি পেমেন্ট সিকিউরিটি কাঠামো গঠন করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির কোম্পানিগুলোর সমন্বিত উদ্যোগেই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব, যা দেশের জ্বালানি খাতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *