রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
দুইদিন বন্ধ থাকার পর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রাতে রাস্তায় পাহারা বসিয়ে নির্বিচারে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এমনটি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। অভিযোগ দিয়েও তেমন কোন কাজ হচ্ছে না। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন একটু তৎপরতা দেখালে দুইদিন মাটি বন্ধ থাকার পর পুনরায় কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। মাটির পাহারা গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটায়। সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এতে আশঙ্কাজনকভাবে শাহজাদপুরে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত পোতাজিয়া, গাড়াদহ ও কায়েমপুর ইউনিয়নই কৃষি জমির ওপর গড়ে উঠেছে ১৫টি ইটভাটা। কতিপয় জমির মালিকদের অর্থের প্রলোভন দিয়ে বাকি জমির মালিকদের বেকায়দায় ফেলে ইটভাটার মালিকরা এখন তিন ফসলি ও দুই ফসলি জমি থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় কৃষি বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলায় এ বছর ১৫টি ইটভাটা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ইটভাটা রয়েছে গাড়াদহ ও কায়েমপুর ইউনিয়নের মধ্যে। অভিযোগে জানা গেছে, এ বছর শাহজাদপুরে ১৫টি ইটভাটা চালু থাকলেও মাত্র ৪টি ইটভাটা পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছে। বাকিগুলো চলছে অবৈধভাবে। গাড়াদহ ইউনিয়নের আব্দুল কুদ্দুসসহ একাধিক জমির মালিক অভিযোগ করেন, কায়েমপুর ইউনিয়নের হরিরামপুর জিআরসি ভাটার মালিক এরশাদ ও তার অন্যান্য পার্টনার মুহুর ভাটার পাশে ২ বিঘা তিন ফসলি কৃষি জমি উচ্চ মূল্যে ক্রয় করে সেখান থেকে রাতের আঁধারে ভেকু মেশিন দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জমির মালিকরা জানান, বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ, এসিল্যান্ড মুসফিকুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামানকে জানানো হয়। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে কায়েমপুর ও গাড়াদহ থেকে তিনটি মাটির ট্রাককে আটক করে প্রতি ট্রাককে মাত্র ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর মাত্র দুইদিন বন্ধ থাকার পর ভাটার মালিকরা রাতে রাস্তায় পাহারা বসিয়ে ফের মাটি কাটা শুরু করেছে। এদিকে শাহজাদপুর ইটভাটার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষেই তারা ইটভাটা চালু করেছে। এদিকে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম জানান, শাহজাদপুরে ১৫টি ইটভাটা চালু রয়েছে। তিনি আরও জানান, ১৫টি ইটভাটা শাহজাদপুরে চালু থাকলেও ৪টি ইটভাটাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে তিনি বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি দেখবেন উপজেলা প্রশাসন, এসিল্যান্ড অফিস অথবা কৃষি অফিস। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জান জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ হচ্ছে, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা। তবে তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর কোন সময় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করলে আমরা তাদের আইনি সহায়তা দিব। তিনি আরও জানান, এর মধ্যে তিনটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে।