ePaper

খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উন্নয়ন, কৃষকের আর্থিক সহায়তা ও প্রবাসী আয়ের অগ্রযাত্রায় বিকেবি

উত্তম দাম

কৃষিই সমৃদ্ধি এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের কৃষি উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকের আর্থিক সহায়তায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। দেশের মোট কৃষিঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ এ ব্যাংক বিতরণ করে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সময়োপযোগী ঋণ সহায়তা প্রদান করে আসছে। জীবননির্ভর কৃষি থেকে দেশ এখন বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। এ যাত্রায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সহায়তায় কৃষি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। প্রতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত দেশের কৃষি খাতে মোট বরাদ্দকৃত ঋণ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৫% ঋণ বিতরণ করে আসছে। বর্তমানে ১,০৩৮টি শাখা এবং ৪টি উপশাখার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০১ সালে রেমিট্যান্স কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। প্রথমদিকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাজ হলেও ২০১৪ সালে শুরু হয় ডিজিটাল রূপান্তর। বর্তমানে এচ ইন্টারনেট মডেম ও অচও ভিত্তিক ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রাহকের হিসাবে বা নগদে তাৎক্ষণিক রেমিট্যান্স বিতরণ করা হচ্ছে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম, রিয়া মানি, মাস্টারকার্ডসহ মাত্র ২৭টি আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে ব্যাংকটি। অন্যদিকে দেশে রেমিট্যান্স আনয়নে শীর্ষে অবস্থানকারী ন্যূনতম ১০০ টি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। পাশাপাশি বিকাশ ও নগদের সঙ্গে অচও সংযুক্তির মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রদান করছে ব্যাংকটি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫,৭৫০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্জন হয়েছে ২৫,৭১৪.১৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৬৩ শতাংশ। মার্কিন ডলারে এই অর্জনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১১১.১৮ মিলিয়ন এটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বোচ্চ সাফল্য। গত ২১ মে পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স আহরণ উদযাপন করেছে ব্যাংকটি। অন্যান্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় জনবল ও লজিষ্টিক সাপোর্টের ঘাটতিসহ বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা সত্বেও রেমিট্যান্স আহরণে সকল ব্যাংকের মধ্যে বাকেবি দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ২০০১ সালের পর দীর্ঘ দুই দশক লোকসানে থাকলেও ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে নতুন পরিবর্তনের সূচনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সকল পুণঃতফশিলিকৃত কৃষি ঋণ শ্রেণীকৃত করার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ হঠাৎ বৃদ্ধি পায় এবং কোন প্রভিশন ঘাটতি না রাখায় প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকের মূল সমস্যা উদঘাটন এবং উত্তোরণের সময়ভিত্তিক কর্মকৌশল প্রণয়ন করে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। তার সুনিপূণ পরিকল্পনার তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে গতি বাড়ে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৬ সালের জুন নাগাদ ব্যাংকটি প্রোফিটে যাবে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বজায় রাখতে আমানত সংগ্রহে জোর দিচ্ছে বিকেবি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১,০০০ কোটি টাকা। জুন ২০২৫ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৫,০১৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৯,৭০০ কোটি টাকা। জুন ২০২৫ পর্যন্ত পুঞ্জিভূত অর্জন ১৭,২৭২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষি খাতে শস্য, আখ, প্রাণিসম্পদ, যন্ত্রপাতি, বীজ উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে কৃষি ব্যাংক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮,৫০০ কোটি টাকা, অর্জন হয়েছে ১০,৮০০ কোটি টাকা (১২৭%)। রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২,০০০ কোটি টাকা, অর্জন হয়েছে ১,২৫৭ কোটি টাকা (৬৩%)। যদিও ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, তবুও আদায় বৃদ্ধি এবং পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলার চেষ্টা করছে বিকেবি। এ ছাড়া রেমিট্যান্স সেবা সম্প্রসারণ, নতুন এক্সচেঞ্জ হাউস স্থাপন এবং নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ চালুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কৃষি ও কৃষক উন্নয়ন, প্রবাসী আয় ব্যবস্থাপনা, আমদানি-রফতানি ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এখন দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *