মো. তাসলিম উদ্দিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সরাইল
সরাইল উপজেলা শাহবাজপুর ইউনিয়নে নিখোঁজের একদিন পর মাইমুনা আক্তার ময়না নামের ৯ বছর বয়সী শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শাহবাজপুর ইউনিয়নের হাবলিপাড়া জামে মসজিদের দ্বিতীয়তলা থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশু ময়না শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছন্দুমিয়া পাড়া এলাকার প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার মেয়ে এবং হাবলিপাড়া মাদ্রাসার ছাত্রী ছিল। প্রসঙ্গত, গত ৫ জুলাই শাহবাজপুর ইউনিয়নের এক গ্রামে ময়নাকে হত্যার ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানা গেছে। দ্বিতীয়তলায় ময়নার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়। নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার ৯ বছরের মাদরাসাছাত্রী ময়না আক্তারকে চিরবিদায় জানিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের মানুষ। সোমবার বাদ আছর শাহবাজপুর খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় অশ্রুসিক্ত নয়নে অংশ নেন শত শত মানুষ। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ময়নার বাবা প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক দেশে ফিরে আসার পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা ঘিরে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতারাও জানাজায় অংশ নেন। ৩ দিন ধরে ময়নার হত্যাকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে। হত্যার মূল আসামিকে গ্রেফতার করা। শাহবাজপুরে মধ্যযুগীয় কায়দায় শিশু মায়মুনা আক্তার ময়না হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটন, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে। ময়না হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ৯ বছরের শিশু ও পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ময়না হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরাইল উপজেলার বিশ্বরোড মোড়ে সরাইল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেন। নিহত ময়নার গ্রামের শত শত মানুষও এ কর্মসূচিতে একাত্মতা জানান। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, “নিরীহ শিশু ময়নার নির্মম হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করছি।”মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, “ময়নার পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়, এজন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।” ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ময়না নিখেঁাঁজের পরের দিন মসজিদের ঈমাম ময়নার মাকে খবর দেয়। পরে গ্রামবাসী মসজিদে গিয়ে ময়নার বিবস্ত্র ও গলায় কাপড় পেছানো অবস্থায় লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ, পিবিআই ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশ উদ্ধার করে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ ময়নাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ময়না আক্তারকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নিহত ময়নার মা মোসা. লিফা আক্তার বাদী হয়ে গত রোববার রাতে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় মসজিদের ইমাম হামিদুর রহমান-(৩৫) ও মোয়াজ্জিন সাইদুল ইসলাম-(২৫) কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, “নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। পাশাপাশি যাতে নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হয়, প্রশাসনকে সে দিকেও নজর দিতে হবে।”তিনি জানান, জেলা বিএনপি নিহত শিশুর পরিবারের পাশে রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত। জানাজায় ময়নার চাচা সেলিম মিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমাদের ময়নাকে যারা এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে আমরা বাধ্য হব। এদিকে নিহত ময়নার মা মেয়েকে হারিয়ে চোখের জলে বুকফাটা কান্না দিয়ে, মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন। যারা তার মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আসামিদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিও জানিয়েছেন। এর আগে গতকাল রোববার (৬ জুলাই) সকালে শাহবাজপুর হাবলী পাড়া জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ৯ বছর বয়সী শিশু ময়নার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্রী ছিল। তার বাবা বাহরাইনপ্রবাসী। এর আগে শনিবার বিকেলে মাদরাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয় ময়না। খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না মেলায় রাতেই সরাইল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন স্বজনরা। এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার(সরাইল-সার্কেল) তপন সরকার এ প্রতিনিধিকে বলেন, “এটি একটি হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড। পুলিশ সর্বোচ্চ আইনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক গুরুত্বের সাথে সত্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চলছে।” খুব দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেন এই পুলিশের কর্মকর্তা। ‘ময়না কবরে, খুনি কেন বাহিরে” উপস্থিত ছাত্র- জনতার স্লোগানে এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড প্রকম্পিত হয়।