সাচ্চা মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সরকারি খাতায় নাম ওঠেনি তাঁর। তাঁর কথা তাঁর ছেলের মুখে শুনেই যুদ্ধেরও বহু পরে এসে কলম ধরেছি। আবেগে জল এসেছে আমার চোখের কোণে। আর মুক্তিযোদ্ধা বাবার সবছোট ছেলের বুকে বেঁজেছে তার করুণ সুর।
ছেলের বুক ফেটে, গলা চিরে, চোখ বেয়ে ক্রোধান্বিত তির্যক ফলনে ঝরেছে আক্রোশ। কারণ স্বাধীনতার জন্য যিনি গাজি হলেন তিনি আজ উচ্ছিষ্ট কতক লোকের চোখে। তাঁর প্রবাসী ছেলের মুখে অভিযোগটি শুনলাম,
— “ঘুষ দিয়ে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম লেখাতে হবে? ”
যা তাঁর জীবদ্দশায় হয়নি এবং পরবর্তীতে তাঁর উত্তরাধিকারীরা শত চেষ্টা করেও পারলেন না। সেজন্যই আজকের লেখার সুত্রপাত।
কবি নজরুল দেখেছেন সব। নিজের হাতের অস্ত্রে বারুদের গন্ধে মেখেছেন নিজের ঘাম। তাই তাঁর কলমেও ছিল জীবনের বিদ্রোহ। আমার আছে কেবল উপস্থাপন। তাই কারো মরমে স্পর্শ না করুক কিন্তু অনেকের অজানা মানুষটি হারিয়ে যাবার পরও তাঁর প্রবাসী ছেলের সব কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলাম।
যুদ্ধোত্তর মুক্তিযোদ্ধার সেই তেজ আর নেই। তবে তাঁর নাম শুনেই গায়ের জোরে সবাই তাঁর নাম সরিয়ে রেখেছেন ইচ্ছের ভুলেভালে। কিন্তু মৌখিক স্বীকৃতি মেলে কদাচিৎ। সমাজের আষ্টে পড়া চোখে অসহায় হয়ে গেছেন তাঁর সন্তানেরা। কোথাও গিয়ে কিচ্ছু করতে পারছেন না।
আমিও সংকুচিত হয়ে থাকি যেন অতিরঞ্জিত কিছু বলে উপহাসের পাত্র না হই। সেজন্যই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার লেখা বা কলমের ব্যবহার চলে ঠিক কলম মেপে মেপে। যতটুকু বিশ্বাস করি, কখনওবা কিছু প্রমাণও পাই এবং অনুভব করি তারচেয়েও বেশি।
সবার কাছে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ও স্বীকৃতি না পেলেও নিখুঁত খাঁটি হয়ে গুমরে চলেছে তাঁর সন্তানদের অন্তর। আর আমি তাঁর সন্তান তুল্য ছেলের আসন হতে এই মরহুমের শেষ প্রাপ্তির গল্প শোনাচ্ছি।
৩৯ বছর বয়সে ১৯৭৪ সালে তিনি বীর বিক্রম এম এ মান্নান এর সাথে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাঙ্গে দেখা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।
আজ শুধু একটাই কামনা ২০১০ সালে গত হওয়া এই মরহুমের কবরে গিয়ে কেউনা যেন বলে ফেলুক,
–“প্রিয় মুক্তিযোদ্ধা, তোমার নামটা হয়তো ভুল করে এখনও সরকারী খাতায় ওঠেনি। এতে তদবির লাগে, লাগে খরচা। তাতে নামটা সরকারী খাতায় উঠবে। যাতে তোমার উচিত অংকের ভাতা পাবার সুযোগ হবে।”
জীবন হতে নেওয়া গল্পের নির্মমতাই এটা। জাতির নির্লজ্জতার গল্প কিনা জানি না। তবে দৃশ্যপট : বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তী সময়।
তখনও সকাল হয়নি। রাতভর চিন্তা ও সঙ্কায় ঘুম হয়নি যাঁর, তাঁরই বদৌলতে শেষে কিনা রাজাকারদের ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হলো এক নিমিষেই।
নাম আব্দুল খালেক মিয়া। বাবা-মার একমাত্র পুত্রের বুকের পাটায় এত জোর ছিল সেটা হয়তো প্যারালাইজ্ড বাবা জানতেন না। প্রয়োজনের অস্ত্রের গর্জনই সব বলে দিল।
১৯৭১ সাল যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আলফাডাঙ্গা থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ মান্নান (বীর বিক্রম) এর নেতৃত্বে শক্তিশালী দলটিতে আব্দুল খালেক মিয়া ছিলেন অকুতোভয় ও অত্যন্ত মেধাবী সৈনিক। এমনকি তাঁর দলের নতুনদের মধ্যে একমাত্র তিনিই অস্ত্র পরিচালনা জানতেন, যা ঐ সমকালীন সময়ে প্রচন্ডভাবে দরকার ছিল। পরে তিনিই অনেককেই ট্রেনিং করিয়েছেন। পাকিস্তান পুলিশে চাকুরী জীবনের অভিজ্ঞতা সেদিন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই কাজে লেগে গেল।
গ্রামের পোটন মিয়া। যিনি শ্রীরামপুর নিবাসী। তাঁর বাড়ির দক্ষিণ পাশ দিয়ে বর্ষায় নৌকোয় করে আগ্নেয়াস্ত্র সহ যাচ্ছিল একটি রাজাকারের দল। একই গ্রামের আব্দুল খালেক মিয়া সহ সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে ফেললো তাদের। বাধ্য করবে তাদের আত্মসমর্পণ করতে অথবা মরতে। সমস্যাটা অন্যখানে। মুক্তিযোদ্ধাদের দলে প্রয়োজনীয় অস্ত্র থাকলেও কেবল আব্দুল খালেক মিয়া ছাড়া কেউই তা পরিচালনা করতে জানতেন না। শেষে তাঁরই রাইফেল হতে ছোটে গুলির বর্ষণ। এতেই ভড়কে যায় রাজাকাররা। সেই বদৌলতে উদ্ধার হয় এক এক করে ১৬ টি আগ্নেয়াস্ত্র।
এখনও জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ও রাজ সাক্ষীদের মধ্যে আক্তার লস্কর (গ্রাম – বুড়াইচ), সুকুর মোল্লা (গ্রাম-শ্রীরামপুর), লাবু মিয়া (গ্রাম-শ্রীরামপুর) সহ অনেকেই আলফাডাঙ্গা-ফরিদপুরের ঘটে যাওয়া এই ঘটনার সহজ বর্ননা দেন।
দিন বদলের যুগে এসে আজ অনেক আব্দুল খালেকের নাম সরকারী খাতায় ওঠে না। তাঁর তিন ছেলের পায়ের জুতো ক্ষয় হয়ে গেছে ক’জোড়া তা কেউ জানে না।
বড় ছেলে অবসর প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য, মেঝ ছেলে এখন বাংলাদেশ সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং ছোট ছেলেটি আজ প্রবাসী। ছেলেদের এমন অবস্থান থাকা সত্তেও প্রবাসী ছেলের মুখ হতে হুবহু বর্ননা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছি। সে এতটাই কষ্ট ও ক্ষোভে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিল যে আমি তাকে শান্তনা দিয়ে ধরে রাখতে পারছিলাম না। তাই মনোযোগ দিয়ে কেবল শুনে যাচ্ছিলাম। প্রবাসী স্নেহের ছোট ভাইটি আবার বলা শুরু করলো।
—- “যুদ্ধ শুরু হল। মানুষ যে সময়ে অস্ত্র চালনাসহ যুদ্ধ করার কৌশল শেখার জন্য ভারতে ট্রেনিং নিতে যাচ্ছে, সেই সময়ে আমার আব্বা (আব্দুল খালেক মিয়া) বীরবিক্রম এম এ মান্নান চাচার অধীনে যুদ্ধ শুরু করেন।
আজ আব্বার সহযোগী সবাই “বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা”; কিন্তু নতুন লিস্টে আব্বার নামটিও নেই। লিস্টে নাম ওঠানোর জন্য আব্বা যুদ্ধ করেননি। কিন্তু তিনি যুদ্ধ করেছিলেন এই কারণে যে আমার বা আমাদের জন্ম যেন অভিশপ্ত পাকিস্তানের পতাকা তলে না হয়।”
কথাগুলো বলতে বলতে দেখলাম ওর গলা জড়িয়ে যাচ্ছে বার বার। আমি ওর আদ্রতার স্বাদ পাচ্ছি। আমি বললাম,
— সে সময়ে সবাই একই মানষিকতা নিয়ে লড়েছেন। আজ দিন বদলে গেছে ভাই। দৌড়াদৌড়ি না করলে কেউ জানতেও চায় না; কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে নন।
একটু থেমে আমার কথার রেশ ধরে ও আবার বললো,
— “ভাইয়া, এমন তো হবার কথা ছিল না। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট জাতি হারিয়েছে তার আর্কিটেক্ট পিতাকে। তারপরে অনেকবার সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়েছে দেশের অসংখ্য মুক্তিসেনারা। জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন করা দেশটা এমন হয়ে গেল কেন?”
আমার উত্তর দেওয়া হলো না। শুধু ভাবলাম, এমন হবার কথা কি সত্যিই ছিল?
১৯৫৮ সালে পাকিস্তান পুলিশে কিছুদিন চাকুরি করেন। তারপর তাঁর মায়ের চাপাচাপিতে একমাত্র ছেলে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু বারুদের গন্ধ যাকে টেনেছিল, তিনি কি করে বসে থাকবেন খালি হাতে? তাই বাড়িতে এসেই আলফাডাঙ্গা থানার আনসারদেরকে ট্রেইন-আপ করার কাজে লেগে যান। এই কাজ চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত।
আর যুদ্ধের নয় মাসের অবদান বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাঁর স্বীকৃতি ও সমাধান নিয়ে আছে বিস্তর বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। তা যে কতটা নির্দয় ও যাতনার সেটা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন।
এবার একটু থেমে খুব আস্তে আস্তে বললাম,
— “ছোট ভাই, যুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা থাকে যা পরবর্তীতে খুব কষ্টের কারণ হয়। এমন কিছু তোমার চোখে পড়েছে যা আমাকে বলতে চাও?”
টেলিফোনের ওপাশ হতে কোন কথা নেই। একদম নিশ্চুপ। ওর গলার স্বর হয়তো চলছিল না। তাই একগাদা বর্ননায় লিখে পাঠিয়েছে আমাকে। আমি পড়া শুরু করলাম। কিন্তু লাইনগুলোর অর্থগুলো এতই ভারি যে আমাকে তার ভর সইতে হচ্ছে। লিখেছিল ,
— “ভাই, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়। বাড়িতে শুধু পোড়া টিন ছিলো। আমরা প্রায় সব ভাইবোনেরা জন্মেছি ওই পোড়া টিনের নিচে। তবে ওই পোড়া টিনই আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আমি এমন একজন মানুষের ঔরসে জন্মেছি যিনি অসাধারণ গৌরবের অধিকারী। একজন যোদ্ধা। আর আমি গর্বিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান!
বিশ্বাস করেন ভাইয়া, রাজপ্রাসাদের চাইতে ওই পোড়া টিন আমার কাছে হাজার গুন উত্তম ছিল। কিন্তু আজ! আমার ভাষা হারিয়ে গেছে ভাই। সমাজে আর পাঁচটি পরিবারের মধ্যে আমাদের পার্থক্য কেবল কদরে। কদরটা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার বলে প্রমাণ হয় বেসরকারী মৌখিক গল্পে। তা বহুবছরে এক-আধবার। হয়তো কোন পৌরাণিক গল্পের মত খুব বয়স্কদের মুখে। এইটুকুই যা। সরকারী খাতায় নয়।
আর হাজার দশেক টাকা? ভাতার ঐ টাকা দিয়ে কি হবে ভাই? ওটা তাদের লাগবে যারা ঐ ভিক্ষেটা খেতে নিজেরা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লিখিয়েছে। আমরা ভাইবোনেরা নিজেরা গিয়ে এখন সে ভিক্ষে নেব কেন?”
আমি সবটুকু পড়ে থ হয়ে গেলাম। নিজেকে ওর জায়গায় নিয়ে গেলাম। ওর মলিন মুখটি, পুড়ে পুড়ে যাওয়া মনের ক্ষতটি, আকাশে বাতাসে ওর বাবার অতৃপ্তি আত্মাটির অভিসম্পাত বুঝতে পেলাম। আহ্, এমন দিনও বংশ পরম্পরায় বয়ে বেড়াতে হয়? আমার কলমের কালিতে আজ হয়তো পুরোটা বোঝানো যাবে না। হঠাৎ একটি গানের কলি খুব মনে পড়ে গেল। এই গানের কথাগুলিই হয়তো এখানে সবচেয়ে বেশি করে খেটে যাবে।
— “কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত/
কত প্রদ্বীপ শিখা জ্বালালে জীবন আলোয় উদ্দ্বীপ্ত/
কত ব্যথা বুকে চাপালে তাকে আমি বলি ধৈর্য /
নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ /
চিৎকার করে কাঁদতে চাহিয়া করিতে পারি না চিৎকার /
বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।”
পুরো গানটা ইউটিউবে কয়েকবার আমি শুনলাম — রিপ্লে করে করে। আসলেই আমরা জাতি হিসেবে কতটা নির্লজ্জ তা এই গানে খুব স্পস্ট করে তুলে ধরেছেন গায়ক ও গীতিকার হায়দার হোসাইন।
৭ই মার্চের আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের কথা বার বার উঠে আসলো দুজনের কথপোকথনে। কথা তখনও চলছে। সে ভাষণের প্রতিটি শব্দের ভাইব্রেশন আজও বাতাসে ভাসে। সেই সাথে আমার চোখে ধোঁয়াশার মত ভাসতে থাকলো নাম না জানা আরও কত খালেক মিয়া। যাঁদের খবর কেউ রাখে না অথবা খবর রাখার জন্য নিজেদের বুকটা ভারি করতে চান না।
আমি শেষ প্রশ্নটি করবো কি করবো না ভাবছি। শেষে প্রশ্নটি করেই ফেললাম। — আচ্ছা, তুমি কতটুকু চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছিলে ছোট ভাই?
জবাবে আমাকে ববললো,
— “আব্বা জান্নাতবাসি হয়েছেন ২০১০ সালের ৭ জুলাই।
আর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ। আমি আলফাডাঙ্গায় একজনকে ফোন করে আব্বার কথা বলতেই তিনি আমাকে বাড়িতে যেতে বললেন। কারণ তিনি নিজেই আব্বাকে সবিস্তারে জানেন। আমার আব্বার হাতে অনেক মানুষ অস্ত্র-চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগেই। বর্তমানের বহু নেতা ও তাদের পৌষ্যজনেরা অস্ত্র চালনো দূরের কথা – বন্দুকের ট্রিগারে জীবনে একটিবারের জন্যও টিপ মেরেছে কিনা সন্দেহ।
শুনেছি মানুষের কাছে নিজেকে দাবি করতেন “সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা” হিসেবে। পরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ রেখে তারাই হয়ে যান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমি বলি ‘চুক্তিযোদ্ধা’। ভাইয়া, আর কত আফসোস শুনতে চান?”
এবার আমি বললাম,
— না ভাই, তোমাকে আর বলতে হবে না। যদি কিছু বলতেই হয়, তবে আমিই অতি বিনয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করবো।
যে ব্যক্তির চাক্ষুষ প্রমাণ আছে, সাক্ষী আছে, আছে দাবি। আছে সত্যিকারের সঠিক মর্যাদা পাবার অধিকার। যিনি মূল সার্টিফিকেটটি ১৯৭৪ সালে পুলিশে চাকুরি নেবার সময় জমা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবারও বাংলাদেশ আমলেই ২০০০ সালে সরকারী খাতায় তাঁর নাম নথিভুক্ত করার একটি সুপারিশ সম্বলিত চিঠি লেখা হয়। যাতে যুদ্ধ শেষে জমাকৃত অস্ত্র নং – R-C-301335 আজও তাঁর শেষ স্বীকৃতির প্রমাণ বহন করে। কিন্তু স্বীকৃতি আর মেলে না।
সমাজে কোন স্বীকৃতি নেই অথচ আছে পুরোনো একটি সার্টিফিকেট। অনেকে হয়তো ভাবেন সার্টিফিকেট কিনতে পাওয়া যায়। এটা তারই একটি কপি কিনা কে জানে।
শেষ সম্বল আলফাডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ মান্নান (বীরবিক্রম) এর স্বাক্ষরিত চিঠিটি হয়তো এই মহান মুক্তিযোদ্ধাকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার হাত হতে মান বাঁচালো। যার প্রমাণ ছবিতে দিয়ে রাখলাম যেন রাজসাক্ষী হয়ে থাকে সারা জীবন।
জীবনে কারো জন্য কতটুকু করতে পেরেছি তা জানি না। তবে এই পরিবারের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি সদয় জ্ঞাপন করেন তাহলে আমার চেয়ে আর কে বেশি খুশি হবেন?
কাউকে আঘাত করতে নয় বরং কারো বুকের আঘাত তাঁর পরিবার সারা জীবন বয়ে যাবে কিন্তু কেউ জানবে না, তা কি করে হয়? পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত হতে কিছু করতে চাইলেই করা যায়। আর আমিও তাদের বোবা কান্নার চিৎকার শুনে সমাজের বিবেকবানদের বিবেক নাড়াবার না হয় খানিক দূর্বল চেষ্টাই করলাম।
সামান্য আঁচড়ে অবিভাজ্য শ্রীতে কষ্ট না হয় বাড়ুক সমাজের। বেড়ে বেড়ে ফুলে ফুঁসে উঠুক না হয় বোবা কান্না হাহুতাশ। রেহাই পাক দেশ – স্বাধীন করার পরের অতৃপ্তি আত্মার করুন চিৎকার। যেন জাতির নির্লজ্জতা আর প্রকাশ না পায়।।