শাহীন মুন্সী, গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
যৌতুক লোভী পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার-নির্যাতনে ঘরছাড়া হয়েছেন এক গৃহবধূ। স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়া ওই গৃহবধূর ৫ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ন্যায় বিচার ও শিশু সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য গ্ৰামের মুরব্বিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ও হাত-পা ধরেও কোন প্রতিকার পাননি।
ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নিজড়া ইউনিয়নের মোল্লা কান্দি গ্ৰামে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০জুন তারিখে নিজড়া গ্ৰামের নাছির উদ্দিন শিকদারের ছেলে তারেক শিকদারের সাথে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক ও রেজিঃ কাবিন মূলে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ মুন্না বেগমের বিবাহ হয়। বিবাহের সময় যৌতুক বাবদ ২ লক্ষ টাকা, ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও সংসারের আসবাবপত্র নেয় তারেক ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। বিবাহের ৮মাস পর ওই গৃহবধূর স্বামী তারেক শিকদার কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যায়। কিছু দিন পরে শশুর নাছির উদ্দিন, শাশুড়ি সুলতানা বেগম, দেবর ফাইজুর শিকদার, শরিফুল শিকদার ও ইমাম শিকদার আবারও টাকা দাবি করেন। গৃহবধূ তার বাবার বাড়ি থেকে পুনরায় যৌতুক এনে দিতে রাজি না হওয়ায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। অপরদিকে তার স্বামী কর্ম হারিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এসময় তারেক শিকদার ও গৃহবধূ মুন্না বেগমের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। পরবর্তীতে আবারো বিদেশে যাওয়ার জন্য স্বামী তারেক সহ পরিবারের সবাই ৪ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা এনে দিতে অপারগতা জানালে নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে তিনগুণ হয়ে যায়। একপর্যায়ে শিশু সন্তান সহ গৃহবধূ মুন্নাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ঘরছাড়া ওই গৃহবধূর শিশু সন্তান নিয়ে ২ বছর যাবৎ অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও হাঁস-মুরগী পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিজড়া মোল্লা কান্দি
গ্ৰামের একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, নাছির উদ্দিন শিকদার একজন প্রতারক, তার ৫টি ছেলে। সে দীর্ঘদিন ধরে ছেলেদের বিবাহের নামে নিরীহ পরিবারের মেয়েদের ফাঁসিয়ে যৌতুক বানিজ্য করে আসছেন। কয়েক বছর আগে ছেলে শরিফুলকে দিয়ে সাথী নামের এক মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে যৌতুক পাওয়ার আশায় একই প্রকারের অত্যাচার করিয়েছে। সাথী নামের মেয়েটিও একটি বাচ্চা নিয়ে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। মেয়েটি এখন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এই ধরনের একটির পর একটি অপকর্মের জন্য গ্ৰামবাসী তাদের এলাকা ছাড়া করেছে। বর্তমানে তারা গোপালগঞ্জ শহরের গাবতলা এলাকায় জায়গা কিনে বসবাস করছে।
নির্যাতনের শিকার মুন্না বেগম সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, আমার শশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের আশায় আমাকে তাঁদের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিল। আমার বাবা মারা গেছেন, ভাইরা বিবাহ করে আলাদা সংসার করছেন। এখন কিভাবে আমি তাদের টাকা এনে দিব। এই সূত্র ধরে প্রতিদিনই আমাকে সবাই মিলে শারীরিক নির্যাতন করতো। এখনতো বাড়ি থেকেই বের করে দিয়েছে। আমি শিশু বাচ্চা নিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করে ভাত খাই। শুনেছি ১০লাখ টাকা নিয়ে বিবাহিত এক মহিলাকে বিবাহ করবে।
তবে এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পরিবারের সদস্য তারেক শিকদার ও ফাইজুর শিকদার।