ePaper

সোনাইমুড়ীতে যুগ যুগ দরে নিগৃহীত সংখ্যালঘু কয়েক পরিবার

মাকসুদ আলম সোনাইমুড়ী  (নোয়াখালী) প্রতিনিধিঃ

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দীর্ঘ ৩৫ বছর থেকে প্রায় ৩ একর ৩৬ ডিসিম পৈতৃক সম্পত্তি বঞ্চিত একটি সনাতন ধর্মাবলম্বী কয়েক  পরিবার । স্থানীয় ভূমিদস্যুরা ভুয়া কাগজ তৈরী করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি দখল করে আছে । সংঘবদ্ধ চক্র প্রথমে জাল দলিলের মাধ্যমে জমি আত্মসাতের চেষ্টা, পরে পেশি শক্তির মাধ্যমে জোরপূর্বক

 দখল করে জমি ভোগ করছে চক্রটি। ভোগ দখল করা জমি বিভিন্ন সময় হাত বদলের নামে চলছে বিক্রি।

কয়েক যুগ থেকে এমন জুলুম সহ্য করতে হচ্ছে উপজেলার দেউটি ইউনিয়নের কুমারঘরিয়া গ্রামের নারায়ণ চন্দ্রের পরিবারকে। পৈত্রিক জমির বৈধ দলিল থাকলেও শুধুমাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়ায় অসহায় তারা। বাপ-দাদার জমি-জমা ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে আদালতের রায় তাদের পক্ষে থাকলেও পেশি শক্তির ভয়ে আজও দখলে নিতে পরেননি পৈত্রিক সম্পত্তি। সম্প্রতি সময়ে আবারো তাদের জমি দখল করে পাকা বসত ঘর নির্মাণের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে সোনাইমুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারায়ণ চন্দ্র গুহ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোনাইমুড়ীর ৩৭নং কুমারঘরিয়া মৌজার সাবেক ১৯৪ হালে ৮৮৪নং দাগের বাড়ির ১০০ শতাংশ সম্পত্তির পৈতৃকসূত্রে মালিক নারায়ণ চন্দ্র গুহ। ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ইং  দুপুর ২টার দিকে মৃত সুলতান আহম্মেদের ছেলে মো. হেলাল, সুমন, সাদ্দাম, মহাসিন, মোমিন গংরা ওই জমিতে পাকাঘর ও টয়লেট নির্মাণ কাজ চলমান। এর আগে ওই জমি নিয়ে বিভেদ হওয়ায় নারায়ণ চন্দ্র গুহ বাদী হয়ে জেলার বিজ্ঞ সদর অতিরিক্ত সহকারী আদালতে দেওয়ানী নং-৩০৩/২০০৬ মামলা দায়ের করেন। মামলায় আদালত বাদীর কাগজপত্র পর্যালোচনা করে রায় প্রদান করেন। তারপরও ভূক্তভোগী পরিবার তাদের সম্পত্তি দখলে যেতে পারেননি।বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার গ্রাম সালিস হলেও সালিসদারদের রায় মানেনি হেলাল গংরা।

 জমিজমা সংক্রান্ত মামলায় তারা নিজেদের পক্ষে আদালতের রায় পেলেও সম্পত্তি  দখল মুক্ত করতে পারেনি চক্রটি কে।

৫ আগষ্টের পর দখলচক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হেলাল গংরা ঐ সম্পত্তিতে পাকাঘর ও টয়লেট নির্মাণ কালে বাধা দিতে গেলে ভূমিদস্যু চক্রের সদস্যরা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়। বর্তমানে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই বিষয়ে তিনি ১৩ জনকে বিবাদী করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এই সম্পত্তি তাদের পূর্বপুরুষদের। স্থানীয় ভূমিদস্যুরা ভুয়া কাগজ তৈরী করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি দখল করে আছে ।

কুমার ঘড়িয়া গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ জানান, সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে হেলাল গংরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা অব্যাহত রেখেছে। তাদের এলাকা ছাড়া করতে পাঁয়তারা করছে। আদালতে মামলার রায় ও উচ্ছেদের মামলা চলমান থাকলেও তারা দখল অব্যাহত রেখেছে। তারা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, কুমারঘরিয়া গ্রামের সংঘবদ্ধ চক্রটি  কয়েকটি জাল দলিল তৈরী করে। সেই দলিলের বুনিয়াদে তারা দখল করে নারায়ণ চন্দ্রের বেশ কিছু সম্পত্তি। ১৯৮৮ সালে সেই দলিল বাতিলের জন্য সাব জজ আদালতে মামলা করেন নারায়ন চন্দ্রের পরিবার। সেই বছরের ২৩ মে সাব জজ আদালত ওই জমির ওপরে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ১৬ অক্টোবর বিবাদি পক্ষের দাবিকৃত ৩ একর ৩৬ ডিসিম জমির চারটি দলিল ভুয়া বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিবাদি পক্ষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মিসকেস করলে ২০০৩ সালের ১০ নভেম্বর আদালত মিসকেস মামলা খারিজ করে মামলার আগের রায় বহাল রাখে। ২০০৩ সালে নিজেদের পক্ষে আদালতের রায় পেলেও আজ পর্যন্ত দখলে যেতে পারেনি সংখ্যালঘু পরিবারটি। তবে ২০০৬ সালে আইনি প্রকৃয়ায় জমির দখল পেতে পরিবারটি বেগমগঞ্জ সিনিয়র জজ আদালতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় সেই জমি দখল করে নতুন করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

দেওটি ইউনিয়ন পরিষদে একটানা ৩৭ বছর দায়িত্বে থাকা কুমাদেস্বর নাথ জানান, নারায়ণ চন্দ্রের পিতামহরা দুই ভাই ছিলেন। প্রমদ রঞ্জন গুহ এবং সানা লাল গুহ। সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি চক্র তাদের দুই ভাই এর পরিবর্তে ছয় ভাই দেখিয়ে জাল দলিল তৈরী করে জমি আত্মসাৎ এর চেষ্টা করছে। ইউনিয়ন পরিষদের রেকর্ড ও ট্যাক্স এর কাগজেও তাদের দুই ভাই এর তথ্য রয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে নিম্পত্তি করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি জমি দখল করে পাকাঘর নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল রাজ্জাক জানান, এই সম্পত্তি হিন্দু সস্প্রদায়ের এটা সত্য। তবে তারা এই সম্পত্তি খরিদ সূত্রে মালিক হয়েছেন।

সোনাইমুড়ী থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান, হিন্দু সস্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলের বিষয়ে ১৩ জনকে বিবাদি করে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে এস আই মিঠুন চন্দ্র শীলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *