নিজস্ব প্রতিবেদক
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ক্ষমতায় বসার আগেই কেউ কেউ তাদের ফ্যাসিস্ট চরিত্র দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক শিক্ষার অভাবে তারা ভিন্নমত ও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা করার আহ্বান জানাই।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বুলবুল বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এটাই বৈষম্য। মানুষ সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা ছিনিয়ে নিতে দেয়নি। সেই থেকে শুরু হয় মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। পরবর্তী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এই স্বাধীনতায় এদেশের জনগণ শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড আর পতাকা পেয়েছে। নাগরিক হিসেবে মানুষ স্বাধীনতা পায়নি। তাই নাগরিক স্বাধীনতার জন্য ছাত্র-জনতা ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে।
তিনি বলেন, প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং হচ্ছে। যতদিন এদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকবে ততদিন বাংলাদেশ নিয়ে কোন চক্রান্ত সফল হবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ গঠনে জামায়াতে ইসলামী কাজ করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচনী সংস্কার নয় রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এসব সংস্কার শেষ না করে কোনো নির্বাচন দেওয়া যায় না। তাহলে যারা ক্ষমতায় বসবে তারাও ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ভাষা আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতার বীজ বুনেছে। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু দেশের জনগণ প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা লাভ না করায় ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে।
সেমিনারে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল অন্যায়ের কাছে মাথানত না করা। বাংলাদেশে শুধু ভাষার অধিকার, ভোটের অধিকার আর ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই নয়। কেউ আমাদের উপর জুলুম নির্যাতন আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাইলে শহীদ সালাম, বরকতদের উত্তরসূরিরা রুখে দাঁড়াবে। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সেনানায়ক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির প্রফেসর গোলাম আযমের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুছে দিয়ে ভাষা আন্দোলনকেই অস্বীকার করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের আলোচনা সভায় গোলাম আযমের নাম উল্লেখ করা হয় না শুধুমাত্র তিনি জামায়াতে ইসলামীর আমীর এটাই তার অপরাধ।
তিনি বলেন, যারা ভাষা আন্দোলনের নায়কদের অস্বীকার করছে তারাই ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান অস্বীকার করে। তারাই আবার দাবি করছে ২৪ এর আন্দোলনে ছাত্ররা কিছুই করেনি সব তারাই করেছে। ৫৩ বছর পর ভারত জানতে চায় আমাদের পররাষ্ট্র নীতি কি?- স্পষ্ট বলতে চাই আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হবে ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী অন্য রাষ্ট্রের যে সম্পর্ক আমাদেরও একই সম্পর্ক হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, কামরুল আহসান হাসান, শাহিন আহাম্মদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন।