সাত কোটি ৭০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৩৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের নাজির এবং তাকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করায় তার স্ত্রী, বোন ও বন্ধুর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে জেলা দায়রা ও বিশেষ জজ আদালতে নোয়াখালী দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এ চার্জশিট দাখিল করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা (নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর) কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলা জজ আদালতের নাজির আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নোয়াখালী দুদক দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমতিক্রমে তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তার অনেক দুর্নীতির তথ্য। তার পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নোয়াখালী দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ বাদী হয়ে নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের নাজির আলমগীর হোসেন এবং দুর্নীতিতে তাকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করায় তার স্ত্রী নোয়াখালীর জুডিশিয়াল পেসকার নাজমুন নাহার, তার বোন আফরোজা আক্তার ও তার বন্ধু বিজন ভৌমিককে আসামি করে মামলা করেন, যার মামলা নং-১, তারিখ: ৫-৮-১৯ ইং।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন।
দীর্ঘ অনুসন্ধান ও তদন্তের পর বৃহস্পতিবার জেলা দায়রা জজ ও বিশেষ জজ আদালতে মামলার চার আসামি প্রত্যকের বিরুদ্ধে ৪২০/৪৬৮/৪৬৭/৪৭১/১০৯ দুর্নীতি প্রতিরোধ ৫(২) ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ধারায় চার্জশিট দাখিল করেছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেন, নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের নাজির (সাময়িক বরখাস্তকৃত) আলমগীর ১-১-১৯৯৭ সালে নোয়াখালী জেলা জজ আদালতে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। পদোন্নতি পেয়ে রেকর্ড কিপার ও পরবর্তি সময় নাজির হন।
২০০৬ সালে বিয়ে করে তার স্ত্রীকে ২০০৮ সালে জুডিশিয়াল পেসকারের চাকরি দেন।
দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে আসে তারা স্বামী-স্ত্রী চাকরি জীবনে যা আয় করেন, তার চেয়ে শতগুণ বেশি অর্থসম্পদের মালিক হয়ে যান।
তদন্তে বেরিয়ে আসে নাজির আলমগীর তার স্ত্রী নাজমন নাহার, বোন আফরোজা আক্তার ও বন্ধু বিজন ভৌমিকের সহযোগিতায় ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখে।
কর্তৃপক্ষের বিনাঅনুমতিতে নাজির আলমগীর ঐশি ট্রেডার্স নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। এবং ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ও হুন্ডি করে ৩৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা মানিলন্ডারিং করেন।
তদন্তের পর দুর্নীতি দমন কমিশন আসামি জেলা নাজির আলমগীর হোসেন, জুডিশিয়াল পেসকার নাজমুন নাহার, আলমগীরের বোন আফরোজা আক্তার, তার বন্ধু বিজন ভৌমিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন।
আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেছেন বলে দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম জানান।
তিনি জানান, চার আসামি উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা পর্যন্ত জামিনে রয়েছেন। ইতিমধ্যে দুদক আদালতের মাধ্যমে নাজির আলমগীরের বাড়ি ক্রোক করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। আসামিদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে।