প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো ক্ষমতায় টিকে আছেন বন্দুকের নলের জোরে। বন্দুকও অনেক সময় কাজ করে না। অকার্যকর হয়ে যায় জনগণের শক্তির কাছে।’
ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রিজভী বলেন, ‘ইসহাক সরকারকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এই মুক্তি যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে আর ফুটপাত নয়- রাজপথের সমস্ত কনক্রিট উড়িয়ে আমরা এবার রাজপথে এমন ব্যারিকেড তৈরি করবো, আপনি (শেখ হাসিনা) আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না।’
বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ও ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘ইসহাক সরকার কী অপরাধ করেছে যে, ওর নামে ৩০০টি মামলা। সে তো ফরিদপুরে ছাত্রলীগ নেতার মত টাকা পাচার করেনি! সে তো খালেদ শামীম সম্রাটের মত ক্যাসিনো ব্যবসা করেনি! তারপরেও কেন আজ সে দুই বছরের অধিককাল কারাগারে?’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘টাকা পাচারের সাথে জড়িত ইসহাক সরকার? সে কি ক্যাসিনোর সাথে জড়িত? যারা দীর্ঘ ১০ বছর প্রচণ্ড প্রতাপে ক্যাসিনো ব্যবসা করে আসছে এরা কারা? এরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।’
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে দর কষাকষির বিষয়টিও এসময় উল্লেখ করেন রিজভী।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রী, ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট নিয়ে কত কথাই বলছেন। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়েও বলছেন। তাদের দোষ কী? রাজনৈতিক নেতা যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করে করতে ব্যর্থ হয়েছেন তখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, এই সত্যটা সহ্য করতে পারছে না। একজন সেনাবাহিনীর মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন এটা আপনার সহ্য হচ্ছে না। তাই জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মনগড়া কথা বলছেন। কারণ আপনি জানেন, আপনি কথা বললে কেউ কিছু বলতে পারবে না। সমস্ত মিডিয়া এখন আপনার সরকারের নিয়ন্ত্রণে। গণতন্ত্রের স্বাধীনতা গোরস্থানে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়।’
উপস্থিতি নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির এই শীর্ষনেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মনের ইচ্ছা কী, আপনারা কি জানেন? ‘আমি যা বলবো ওইটা বিশ্বাস করতে হবে। আমি অন্যায় বলবো মিথ্যা বলবো কলঙ্ক লেপন করবো বাজে কথা বলবো- সব বিশ্বাস করতে হবে। আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেবো’-এই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মনের ইচ্ছা। তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম একটার পর একটা কর্মসূচি সাজিয়ে রেখেছেন।’
গতকাল ফেনী জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কী অপরাধ করেছে এই ছাত্রদল নেতা? তার অপরাধ হচ্ছে, দেশের এই করোনাকালীন সময়ে বন্যা দুর্যোগের সময় মানুষের দ্বারে দ্বারে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে। অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এই হচ্ছে তার অপরাধ। ফরিদপুরের ছাত্রলীগের নেতারা ২০০ কোটি টাকা পাচারের ঘটনাটা তো ঢাকতে হবে। কারা ফরিদপুরের মতো শহরে মারসিটিস গাড়ি চালায় এগুলো পত্রপত্রিকায় এসেছে। এগুলো তো ডাকতে হবে। জেকেজির সাবরিনা, রিজেন্টের শাহেদ, ক্যাসিনোর সম্রাট-খালেদের তো ডাকতে হবে। এসব ঘটনা ডাকার জন্যই ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘চারিদিকে এই সরকারের আর কোনও ভিত্তি নেই। দেশের জনগণ থেকে তারা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন। প্রধানমন্ত্রী, আপনার তো এত ক্ষমতা- যাকে তাকে ক্রসফায়ার দিতে পারেন, গুম করতে পারেন। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু দিতে ভয় পান, দিনের নির্বাচন রাত্রে করেন। সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন, ওই সাহস আপনার নাই। কারণ জনগণ আপনার শত্রু। তাই জনগণকে ভয় করে রাতের অন্ধকারে চোরের মত নির্বাচন করে আজকে ইসহাক সরকারদের বন্দি করে রেখেছেন।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সরকারি পুঁজি ২১ আগস্ট এবং ১৫ ই আগস্ট দুটোকে একসাথে মেলাতে চাচ্ছেন। এর কারণ হচ্ছে, এছাড়া সরকারের হাতে কোনও পুঁজি নেই। যে ব্যক্তি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন তাঁকে দোষী সাজানো হচ্ছে। এই যে টেলিভিশন এই যে পত্রপত্রিকা এগুলো কার অবদান, এগুালো সব জিয়াউর রহমানের অবদান। তাই প্রধানমন্ত্রীর এত হিংসা।’
রিজভী বলেন, ‘অথচ যিনি (শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের প্রতি ইঙ্গিত করে) খন্দকার মোশতাককে রক্তাক্ত লাশ ডিঙিয়ে শপথ পড়ালেন তিনি আজকে আপনার অ্যাডভাইজার। তাকে তো আপনি খলনায়ক বলেন না। আপনার তাবেদারি করলে তার সব দোষ মাপ। সমস্ত দোষ কার, জিয়াউর রহমানের। কারণ তিনি দেশে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন খবরের কাগজের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আর বেগম খালেদা জিয়ার দোষ, কারণ তিনি আবারও দেশে গণতন্ত্র দিয়েছেন। আজও তিনি লড়াই করছেন বর্তমান এই দুই নম্বর বাকশালী সরকারের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রকে মুক্তি দেয়ার জন্য।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিমসহ ছাত্রদলের কয়েকশ নেতাকর্মী।